Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

চট্টগ্রামে লাগামহীন ভোগ্যপণ্যের বাজার

নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম * বেশিরভাগ সবজি ১০০ টাকার ওপরে

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে লাগামহীন ভোগ্যপণ্যের বাজার

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের দাম লাগামহীন। কোনো পণ্যের দামে নেই স্বস্তি। অভিযানের পরও কমছে না ডিমের দাম। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায়। আর পাইকারি বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা থেকে ১৬০ টাকায়। আবার কিছু দোকানে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের আড়তে দুই দিন বেচাকেনা বন্ধ থাকার পর আবারও ডিম বিক্রি শুরু করেছেন আড়তদাররা। নগরীতে খুচরা বাজারে এখনো বেশির ভাগ সবজি প্রতি কেজি ১০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢ্যাঁড়শ ও পটোলের মতো সবজিও ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাসাধারণকে। চাল, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি, মাছ ও ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই, যার দামে স্বস্তি আছে।

বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা। কোনো পণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এ ছাড়া পেঁয়াজ চালসহ নানা পণ্যের দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। বুধবার সকাল থেকে পাহাড়তলী বাজারের আড়তে পাইকারি পর্যায়ে ডিম বিক্রি শুরু করলেও দাম কমেনি।

আড়তদাররা জানান, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হয়রানি না করার আশ্বাস পেয়ে ডিম বিক্রি শুরু করেছেন তারা। পাশাপাশি খামারে এখনো দাম বাড়তি থাকায় তারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে ডিম বিক্রি করতে পারছেন না। প্রতি পিস ডিম ১৩ টাকা দরেই পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ডিম আমদানির পরও কমছে না দাম। কেননা ভারত থেকে আমদানি করা ডিমগুলো সাদা রঙের এবং এসব ডিম সাধারণত কিনে থাকেন বেকারি মালিকরা। সাধারণ ভোক্তারা বাদামি রঙের ডিম বেশি পছন্দ করেন। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকার ওপরে। ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার তিন দফা ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু ডিম আমদানি হয়েছে খুব কমই। যা ডিমের বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এমনকি সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ডিমের দাম নিয়ে হতাশ নিু আয়ের মানুষ। বর্তমানে এই ডিমই তাদের পুষ্টি জোগানের অন্যতম প্রধান খাদ্য উপাদান। ভোক্তারা ডিমের দাম কমানোর দাবি জানালেও যতক্ষণ পর্যন্ত মুরগির খাবারসহ অন্যান্য উপকরণের দাম না কমবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডিমের দাম কমবে না বলে জানিয়েছেন খামারি, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। উপকরণের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে ডিমের দাম কমে যাবে বলে দাবি তাদের।

সরকার মঙ্গলবার ডিমের দাম আবারও নির্ধারণ করে দেয়। এতে বলা হয়েছে, বুধবার থেকে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা। খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম কিনতে খরচ করতে হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। শুক্রবারও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকার বেশি দরে।

এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল-উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা করে কিনতে এবং পাইকারিতে সেটি ১১ টাকা ১ পয়সা করে বিক্রি করতে। কিন্তু উৎপাদক পর্যায় থেকে ডিম কিনতে খরচ পড়ছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১৫ পয়সা। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়।

পাহাড়তলী বাজারের ডিমের আড়তদার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে না পারার কারণে আড়তগুলো বন্ধ রেখেছিলাম। প্রশাসনের অনুরোধে আমরা আড়তগুলো খুলেছি। এখনো সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে পারছি না। আড়তে যে ডিম মজুত আছে তা বেশি দামে কেনা। যদি সরকার নির্ধারিত দরে কিনতে পারি তবেই সরকারি দরে বিক্রি করতে পারব। খামারিরা সরকারি দামে ডিম বিক্রি করছে না।’

পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা থেকে ৯৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১২ টাকায়। পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ৯২ টাকার বেশি দামে। খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০-১০৫ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মানভেদে ৫ টাকা কম-বেশি। পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকার বেশি দামে। আর বড় আকারের চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা ৯৫ টাকা দামে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি ১০৫ টাকার বেশি দরে। চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। রসুন ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারদর : সরবরাহ সংকটের অজুহাতে কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামে বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে দাম কমে এখন খুচরায় ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ কয়টি পণ্যের দাম কমা ছাড়া বাকি সব সবজি এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। গোল বেগুন মানভেদে কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, লম্বা বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ, পটোল মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চিচিঙ্গা-ধুন্দল ১০০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা কেজি এবং প্রতি পিস লম্বা লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২১০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজার দর


আরও পড়ুন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম