Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

টঙ্গী শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ

সরকারি ভবন বাণিজ্যিক ব্যবহারের পাঁয়তারা

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে বাতিল হচ্ছে প্রস্তাব

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি ভবন বাণিজ্যিক ব্যবহারের পাঁয়তারা

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

বিজনেস অব অ্যালোকেশনের বাইরে সরকারি ভবন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের পাঁয়তারা চালিয়েছে শ্রম অধিদপ্তর। ‘টঙ্গী শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের পুনর্নির্মাণ ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ভবনের দুটি ফ্লোর বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাখা হয়। কিন্তু এতে আপত্তি দেয় পরিকল্পনা কমিশন। ফলে এ প্রস্তাব বাতিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাতিল হচ্ছে আরও অনেক প্রস্তাবও। ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধনের জন্য ফেরত দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশিদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, কোনোভাবেই এ ধরনের প্রস্তাব আসা ঠিক হয়নি। গত কয়েক বছর থেকে এমন ট্রেন্ড চালু হয়েছে। বিশেষ করে কিছু বাহিনীর নানা ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম দেখে সম্ভবত অন্যরাও শিখেছেন। আমি ভৌত অবকাঠামো বিভাগে থাকার সময় বিটিসিএল একবার এমন প্রস্তাব দিয়েছিল একটি প্রকল্পে। সেটি আমরা কঠোরভাবে আপত্তি দিয়ে বাতিল করেছিলাম। যদি সরকারি ভবনে বাণিজ্যিক ব্যবহারের সুযোগ থাকে তাহলে প্রথমত, বরাদ্দ বা ভাড়ার নামে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, সংস্থার মূল কাজ থেকে মনোযোগ সরে যেতে পারে। তাই সরকারি প্রকল্পে কোনোভাবেই এমন সুযোগ রাখা ঠিক নয়।

সূত্র জানায়, টঙ্গীতে শ্রম অধিদপ্তরের মালিকানাধীন ৮২ শতাংশ জমিতে ষাটের দশকে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এরপর থেকেই বেসরকারি ভাড়া বাড়িতে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই স্থানে পরিত্যক্ত ভবন অপসারণ করে একটি নতুন ১২তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ১৩৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ১০ শতাংশ মূলধন খাতে ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়। প্রকল্পটির আওতায় নির্মিতব্য ভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সেবা, প্রশিক্ষণ ও দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এজন্য আসবাবপত্র, অফিস ও ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কেনা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ করার কথা। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। সভাসূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান মো. ইউনূস মিয়া পিইসি সভায় দুটি বেজমেন্টসহ ১২তলা ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চান। সেই সঙ্গে ফ্লোর ইউজ প্ল্যান সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। এ সময় সভায় অংশ নেওয়া স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান, ভবনের দুটি বেজমেন্টে পার্কিং, স্টোর রুম, ইএমই রুম, ওয়েটিং রুম, রিসেপশন লবি, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট রুম ও অফিস কক্ষ থাকবে। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দুটি ফ্লোর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। এরপর ৪টি ফ্লোর (চতুর্থ থেকে সপ্তম তলা) অফিস, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সেবা, প্রশিক্ষণ, চিলড্রেনস ডে-কেয়ার সেন্টার, কনফারেন্স রুমসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হবে। অষ্টম তলায় পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ইনডোর গেম, জিমনেশিয়াম, ফিজিওথেরাপি সেন্টার, কাউন্সেলিং সেন্টার ইত্যাদি থাকবে। নবম ও দশম তলা প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য আবাসন, ১১তলা ভিআইপি রুম, ইনস্পেকশন রুম, কিচেন, ডাইনিং হাউজকিপিং, বিনোদনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা থাকবে। ১২ তলায় চিকিৎসকদের জন্য আবাসনব্যবস্থা করা হবে।

এ সময় শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান ইউনূস মিয়া আবার বলেন, অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার‌্যাবলি এবং শ্রম অধিদপ্তরের শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের কার‌্যাবলির মধ্যে নির্মিতব্য ভবনের কোনো ফ্লোর বাণিজ্যিক ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না, বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা দরকার। কেননা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সেবা দেওয়ার কথা। এছাড়া কর্মক্ষত্রে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে উপযুক্ত কোনো কাজে পুনর্বাসন করতে অবকাঠামো নির্মাণের সংস্থান রাখা যেতে পারে। এ বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের কার‌্যাবলি বিবেচনায় প্রস্তাবিত ভবনের দুটি ফ্লোর (দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা) বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের পরিকল্পনা বা সংস্থান বাদ দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত প্রকাশ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১২ তলা ভবনের পরিবর্তে ৮ তলা ভবন নির্মাণের সুপারিশ দিয়েছে পিইসি সভা।

সূত্র জানায়, সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অথিরিক্ত সচিব ফাহমিদা আখতার বলেন, প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম বিবেচনায় বেজমেন্টে বাদ দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে মাল্টিপারপাস হল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি রাখা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, নবম ও দশম তলায় প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য আবাসনব্যবস্থা (ডরমিটরি) বাদ দেওয়া যেতে পারে।

সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের শিরোনাম পরিবর্তন করে টঙ্গী শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের পুনর্নির্মাণ রাখতে হবে। এছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করতে হবে। দুটি বেজমেন্টসহ ১২তলা ভবনের পরিবর্তে দুটি বেজমেন্ট বাদ দিয়ে ৮ তলা ভবন নির্মাণ করতে হবে। ভবনের কোনো ফ্লোর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। প্রশিকক্ষণার্থীদের জন্য আবাসনব্যবস্থা, ইনডোর গেম এবং জিমনেশিয়াম বাদ দিতে হবে। এছাড়া জুনিয়র মেডিকেল অফিসারদের জন্য রেবিডেন্সিয়াল কোয়ার্টার বাদ দিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আবাসন সুবিধার সংস্থান রাখতে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম