Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

অনুকূল আবহাওয়া হয়েছে আশীর্বাদ

উত্তরাঞ্চলে রেকর্ড আমন ফলনের আশা কৃষকের

আনু মোস্তফা

আনু মোস্তফা

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তরাঞ্চলে রেকর্ড আমন ফলনের আশা কৃষকের

প্রকৃতি ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আমন রোপণের পর থেকে ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার প্রকৃতিগতভাবে চাষিদের সেচের সব চাহিদা মিটেছে। এতে বেঁচেছে সেচের বাড়তি খরচ। এবার আমনে ভালো লাভের আশাও দেখছেন চাষিরা। মাঠের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সর্বত্রই এখন আমন ধানের শীষ দেখা দিতে শুরু করেছে। চাষিরা বলছেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শীষ ফুটে শেষ হয়ে যাবে। শীষ দেখা দেওয়ার অনধিক ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আমনের সোনালি রঙে রঙিন হয়ে উঠবে ফসলের মাঠ। নভেম্বরের শেষ দিকে মাঠে মাঠে আমন কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম পড়ে যাবে। জাত ও শ্রেণি ভেদে ডিসেম্বরের মধ্যে সব আমন ধান উঠবে চাষির গোলায়। কৃষি বিভাগও এবার আমনের বাম্পার ফলন নিয়ে খুব আশাবাদী। তারা আমনের সম্ভাব্য ভালো ফলনকে আশীর্বাদ হিসাবে দেখছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার উত্তরাঞ্চলে গড়ে হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৫ টন আমন ফলনের আশা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৩ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ হাজার ৭৫৩ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। এই পরিমাণ জমি থেকে ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩১ টন আমন ধান পাওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অতি সম্প্রতি উত্তরের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যার কারণে কিছু আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এতে উত্তরের মোট ফলনের ওপর কোনো প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে না।

চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় সর্বাধিক ৬ লাখ ১৬ হাজার ২৯৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। এই পরিমাণ জমি থেকে ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৩৫ টন আমন ধান ফলনের আশা করা হচ্ছে। এরপর দিনাজপুর অঞ্চলের তিন জেলায় ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমি থেকে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৮০ টন আমন পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বরেন্দ্র ভূমির রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় ৪ লাখ ৭ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমি থেকে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৯৮ টন আমন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরের বগুড়া অঞ্চলের চার জেলায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০ হেক্টর জমি থেকে ১২ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৮ টন ধান ফলনের আশা রয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশের মধ্যে সর্বাধিক ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে উত্তরের নওগাঁ জেলায়। দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত লালমাটির বরেন্দ্র ভূমির নওগাঁ জেলাতে এবার সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৫৬৯ টন আমন ধান পাওয়ার আশা করা হয়েছে। আমন ফলনের এই প্রাক্কলন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। গত মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আমনের হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ছিল ৩ দশমিক চার শূন্য টন। তবে এবার উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অতি উর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি আমনের ফলন ৪ থেকে সাড়ে চার টন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে রাজশাহীর বরেন্দ্র ভূমির তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা, নওগাঁর নিয়ামতপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে আমনে আমনে ভরা সবুজের সমারোহ। ধান গাছে আমনের শীষ উঁকি দিচ্ছে। আইল কিয়ারা জমি হওয়ায় আমন খেতে এখনো পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। তানোরের পাঁচন্দর এলাকার আদর্শ চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩০ মন বা তার চেয়ে বেশি আমন ফলন হবে বলে আশা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা এলাকার চাষি দুরুল হোদা বলেন, এখন হাটবাজারে মনপ্রতি ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এক বিঘায় ৩০ মন ধান হলে চাষি এক বিঘার ধান বিক্রি করে ৩৬ হাজার টাকা পাবেন। এবার সেচের খরচ না থাকায় জমি প্রস্তুত, বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ কীটনাশক ও সার খরচ বাবদ ৭ হাজার টাকা বাদ দিলে চাষির পকেটে উঠবে ২৯ হাজার টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম