পুলিশের গুলিতে স্বপ্ন ভেঙে গেল উমর ফারুকের
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
হ্যালো বাবা, তুমি কিন্তু আসার সময় একটি কালো ঘড়ি নিয়ে আসবে। তোমার কাছে আর কিছুই চাই না। তুমি আমার জন্য দোয়া করো, আমি পড়াশোনা শেষ করে দেশের কল্যাণে কাজ করব। কালো ঘড়ি আর পরা হলো না। বড় কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেল রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. উমর ফারুকের। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
দুদিন পর ২১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার লাশ নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের সিংহা এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়। সেখানে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয় মেধাবী শিক্ষার্থী উমর ফারুকের লাশ। গ্রামের বাড়িতে ছেলেকে কবরে চিরনিদ্রায় রেখে এখনো কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বাবা-মা। বড় ভাইকে হারিয়ে শোকে যেন পাথর ছোট ভাইও। উমরের এমন মৃত্যুতে হতবাক আত্মীয়-স্বজনসহ পুরো এলাকার মানুষ।
পরোপকারী মানুষ ছিলেন উমর ফারুক। মুমূর্ষু রোগীদের রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গঠন করেছিলেন ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই সংগঠনের প্রধান ছিলেন উমর ফারুক। সংকটাপন্ন মানুষকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। পড়াশোনা চালাতে তিনি ঢাকায় চলে গেলেও সংগঠনের কাজ চলমান রেখেছেন নিয়মিত। উমর ফারুকের ছোট ভাই আবদুল্লাহ অনিক জানান, তাদের বাবা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৪ জুলাই দেশে ফেরার কথা ছিল। বাবাকে নিয়ে উমর ভাই বাড়িতে আসবেন বলেছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে ১৯ জুলাই বিকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ভাইয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে আমরা মৃত্যুর খবর পাই। তখন লাশ আনতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায় আমাদের স্বজন। হাসপাতালে গিয়ে লাশ খুঁজতে চাইলে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি আমাদের, হাসপাতালের লোকজন জানায় থানা পুলিশের অনুমতি লাগবে। পরে শাহবাগ থানায় গেলে পুলিশ জানায়, উমর ফারুক নামে কেউ ওখানে নেই। পরে সূত্রাপুর থানায় গেলে সেখানেও এ নামে কারও লাশ নেই বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ। পরে কোনো সুরাহা না পেয়ে আমাদের স্থানীয় সংসদ-সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহীর সহায়তায় হাসপাতালে খোঁজার অনুমতি পাই। সেখানে গিয়ে একটা সাধারণ ঘরে অর্ধশতের বেশি লাশের মধ্য থেকে ভাইকে খুঁজে পাই। পরে ময়নাতদন্তসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। উমর ফারুকের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বোঝা, বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। আমার ছেলে রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাত। এখন সে নিজেই দুনিয়াতে নেই। পরোপকারী ছেলেটার জীবন এভাবে নিভে যাবে বুঝিনি। আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। উমর ফারুককে স্মৃতিতে ধরে রাখতে তার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্লাড ডোনার সোসাইটি’র কার্যক্রম চালাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সহপাঠী ও সংগঠনের সদস্যরা। ইতোমধ্যে নাম পরিবর্তন করে শহিদ উমর ফারুক ব্লাড ডোনার সোসাইটি নামকরণ করা হয়েছে।
