১১ মাসে খরচ হয়েছে বরাদ্দের অর্ধেক
সংশোধিত এডিপিতে ধসের আশঙ্কা
সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছর: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সচিবদের বৈঠক আজ
হামিদ-উজ-জামান
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) বাস্তবায়নে ধস নামতে পারে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, ওই অর্থবছরের ১১ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। কেন এমন হলো-এর সঠিক কারণ খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। তবে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, ডলার সংকটে এলসি খোলার সমস্যা ছিল। ফলে প্রকল্পের পণ্য সঠিক সময়ে হাতে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া রেট শিডিউল পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণের মামলা এবং কৃচ্ছ সাধনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকলেও অর্থ ব্যয় করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের নতুন এডিপির কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়নেও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের ডেকেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, আমরা এডিপির বাস্তবায়ন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। এর অংশ হিসাবে আগামী ৪ জুলাই সব সচিবকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়াতে তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি সমস্যাগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। এ বিষয়টি আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে আরএডিপি বাস্তবায়নের যে অবস্থা এতে করে অর্থবছর শেষেও বাস্তবায়ন হার খুব বেশি বাড়বে না বলে মনে করছে আইএমইডি। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ মাসে (জুলাই-মে ২০২৪ পর্যন্ত) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২ কোটি টাকা।
আরএডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো-নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আরও আছে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৫০ শতাংশের নিচে।
তবে আরএডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো-বিদ্যুৎ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, আইএমইডি, ইআরডি, দুদক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৭০ শতাংশের ওপরে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া আছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এডিপির বাস্তবায়ন বাড়াতে শুরু থেকে বিশেষ নজর দেওয়ার অংশ হিসাবেই সচিবদের ডেকেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ডলার সংকট এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ অর্থবছরের প্রকল্পের বাস্তবায়ন কম হয়েছে। সেই সঙ্গে ডলারের উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। ২০২০ সালে এক ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকার কিছু বেশি। এখন অফিসিয়ালি ১১৭ টাকা।
এ কারণে অনেক ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে হাওয়া হয়ে গেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এখানেও সমস্যা বিভিন্ন নামে এক ঠিকাদার একাধিক লাইসেন্স করে রেখেছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ছাড়া পিডি নিয়োগ দেওয়া যাবে না। নিয়োগ দিলেও তাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে আগে। কেননা নতুন লোককে পিডি নিয়োগ দিলে কাজ বুঝতেই অনেক সময় চলে যায়।
এসব কারণেও বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্থবছর শেষে (জুন মাসের হিসাব পাওয়ার পর) কিছুটা বাস্তবায়ন হার বাড়লেও সেটি তার আগের অর্থবছরের অগ্রগতিকে মনে হয় ছুঁতে পারবে না। তবে আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি যাতে এডিপির বাস্তবায়ন বাড়ানো যায়।
এমনকি প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলেছি। সার্বিকভাবে তদারকি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন হার এতটা খারাপ হবে সেটি আমাদের ধারণার মধ্যেও ছিল না। তবে কোনো কোনো কারণ পিডিসহ আমাদের কারও হাতেও নেই।
তিনি আরও বলেন, কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে বিদেশ সফর, গাড়ি কেনা প্রশিক্ষণ অনেক কাজই বন্ধ ছিল। ফলে বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করা যায়নি। এজন্যই তো সচিবদের ডেকেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে কেন সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে কম আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন এডিপি বাস্তবায়নের সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে।