Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ

পার্বত্যাঞ্চলে লক্ষ্যপূরণে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ

Icon

জাহিদ হাসান 

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পার্বত্যাঞ্চলে লক্ষ্যপূরণে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ

স্থলসীমান্ত ও পাহাড়ি অধিবাসীদের কাছে অ্যানোফিলিস মশাবাহিত রোগ ‘ম্যালেরিয়ার’ সতর্ক বার্তা পৌঁছানো, রোগী শনাক্ত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ ও কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে পার্বত্যাঞ্চলে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। 

এমন বাস্তবতায় সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস-২০২৪ পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্সেলারিটিং দ্য ফাইট এগেনিস্ট ম্যালেরিয়া ফর এ মোর ইক্যুয়েটবল ওয়ার্ল্ড’। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, আদ্রর্তা মিশ্রিত ছায়াযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ অ্যানোফিলিস মশার উপযুক্ত স্থান। এখানে তারা বেশি দিন বেঁচে থাকে। 

পূর্ণাঙ্গ মশা দল বেঁধে উড়ে বেড়ায়। অর্থাৎ ঝোপ ঝাড় ও পাহাড়ি এলাকায় তাদের প্রাচুর্যতা লক্ষণীয়। ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী প্লাজমোডিয়াম নামে প্রটোকটিস্ট জীবাণুর বাহক হিসাবে এ মশা কাজ করে।

মানুষ ও গবাদি পশুর রক্ত এ ধরনের মশার বেশি পছন্দ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য জেলাগুলোর দুর্গম এলাকায় বর্ষাকালে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা যাচ্ছে না। সঠিক সময়ে ওষুধ ছিটানো ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আকস্মিক বন্যাও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আদিবাসীদের ভাষা বোঝা ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ধর্মীয় কুসংস্কার রয়েছে। 

এসব কারণে দেশে ম্যালেরিয়া নির্মূল কঠিন হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি চলছে। এতে ‘ম্যালেরিয়া’ নির্মূল কর্মসূচির সংশ্লিষ্টরা সেখানে রোগী শনাক্ত, পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও ওষুধ বিতরণ করতে পারছে না। বিধিনিষেধের কারণে পার্বত্যাঞ্চলে ম্যালেরিয়া নির্মূল লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। 

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট কীটতত্ত্ববিদরা বলেন, মিয়ানমার ও ভারত আসছে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগী রয়েছে। ভাসমান জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া মিয়ানমারের মশা এন্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স (ওষুধের কার্যকারিতা) হয়ে গেছে। এ মশা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে দেশের ওষুধ আর কাজ করবে না। জুমচাষি ও পাহাড়ের কাঠুরিয়াদের কাছে ওষুধ ও মশারি পৌঁছতে না পারলে পরিস্থিতি মোকাবিলা কঠিন হবে। 

২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে। এ বছরের শেষের দিকে শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কুড়িগ্রাম জেলাকে ম্যালেরিয়া মুক্ত ঘোষণা করা হবে। ২০২৬ সালে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ম্যালেরিয়া মুক্ত ঘোষণার পরিকল্পনা চলছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকা পার্বত্য অঞ্চলের জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়া রোগী প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে ১ এর নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের ১৩ জেলায় ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা পেয়েছি। তাদের মধ্যে প্রিন্সিপাল ফ্যাক্টর চার প্রজাতি ও সেকেন্ডারি ফ্যাক্টর তিন প্রজাতি। এ সাতটি প্রজাতির মশা ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। এর মধ্যে প্রধান চারটি প্রজাতির স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক। যেখানে পাহাড়-বন-জঙ্গল আছে, সেখানে এ মশা বেশি বংশবৃদ্ধি করে। এজন্য দূর্গম এলাকায় অ্যানোফিলিস মশা নিধন কার্যক্রমে ভাটা পড়লে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জ হবে। ঢাকাতেও অ্যানোফিলিস মশা পাওয়া যাচ্ছে।

দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলার ৭২টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রদুর্ভাব বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিদেশ ফেরত ৭৩৭ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ভারতের মেঘালয় ও মিজোরাম ভ্রমণ করে সবচেয়ে বেশি মানুষ। এছাড়া ওমান, দুবাই, সৌদি আরব, মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ঘানা থেকে ফেরাদের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলায় তাদের ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। এর আগের বছর ১৫৯ জন শনাক্ত হয়। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে জানান, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৬১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ১৫৮ জন ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। পাশাপাশি দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৪৭০ জনের পরীক্ষায় ১৬ হাজার ৫৬৭ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে এবং ছয়জন মারা গেছেন। এর আগের বছর ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৯ জনের মধ্যে ১৮ হাজার ১৯৫ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। ওই বছর (২০২২ সাল) ১৪ জন মারা যান।

২০২৩ সালে ১৬ হাজার ৫৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হন। এর মধ্যে বান্দরবান জেলায় ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, রাঙ্গামাটিতে ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, কক্সবাজারে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ শনাক্ত হন। এছাড়া অন্য আট জেলায় শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম