Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

সহকর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এলজিইডির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

৯ মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত কার্যক্রম

Icon

কায়েস আহমেদ সেলিম

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সহকর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এলজিইডির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

আশরাফুল আলম

এলজিইডি’র গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে কর্মরত নারী কর্মীদের যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে একাধিক সূত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। কর্মস্থলে নারী কর্মীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদর দপ্তর থেকে রাঙামাটিতে বদলি করা হলেও ক্ষমতার দাপটে বদলির আদেশ বাতিল করে থেকে যান পূর্বের কর্মস্থলেই। ফলে একই অফিসে অভিযোগকারী নারীকে কাজ করতে বাধ্য করছেন প্রকল্পটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প একটি হরিলুটের প্রকল্প। তরিকুল-রকিবুল-আশরাফুল ও কয়েক প্রভাবশালী পৌর মেয়রের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রকল্প পরিচালক কাজী মো. মিজানুর রহমান সীমাহীন ঘুস দুর্নীতির দুর্গ তৈরি করে দুর্নীতির বরপুত্র হিসাবে খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন দফায় দফায় তদন্ত করেও অদৃশ্য শক্তির কারণে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে এই প্রকল্পের দুর্নীতি ঢাকতে সিন্ডিকেটটি মন্ত্রণালয়ে তদবির করে নিজেদের পছন্দমতো সাতক্ষীরায় কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী সুজায়েতকে পিডি’র দায়িত্বে বসিয়েছেন। সুজায়েত সাতক্ষীরায় নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় নানা আইন বহির্ভূত কাজে যুক্ত ছিলেন। প্রকৌশলী সুজায়েতের আগে এই প্রকল্পে ফরিদপুরে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীকে মাত্র কয়েক দিনের জন্য প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পূর্বতন প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান এবং তার সিন্ডিকেট বর্তমান পিডিকে নিজেদের অপরাধ লুকাতেই এখানে দায়িত্ব দিতে উলঙ্গ ভূমিকা রেখেছেন। কারণ গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সিন্ডিকেটটি কাজী মিজানের অবসরে যাওয়ার পরে পূর্বের দুর্নীতি অব্যাহত রাখতে ও তাদের অপকর্ম প্রকাশিত হওয়ার ভয়ে তার চেয়েও একধাপ এগিয়ে থাকা মো. সুজায়েত হোসেনকে এ প্রকল্পে কোটি টাকা খরচ করে পুনর্বাসন করেছেন।

এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয়ে বেশ কিছুদিন অনুসন্ধান করলে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। একটি প্রকল্পে একজন পিডি নিয়োগের পরে মাত্র এক মাসেরও কম সময়ে কাউকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া এলজিইডি’র একটি বিরল ঘটনা বলে মনে করেন অনেকে। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আউট সোর্সিং) লায়লা জানান, ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর তৎকালীন প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে সাইট পরিদর্শনে যাওয়ার পর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফ গল্প করার ছলে আমাকে হোটেল রুমে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। নারী হিসাবে লোকজ মান-সম্মানের ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখি। কিন্তু আশরাফ প্রতিনিয়তই আমাকে সাইটে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করত। তাছাড়া আমাকে নানাভাবে তার আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে বাসায় অথবা রিসোর্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এমনকি অফিসে আমার সঙ্গে কৃতদাসের মতো আচরণ শুরু করে আশরাফ। পরবর্তীতে আমি উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ জানাই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে রাঙামাটি ও ফরিদপুরে দুবার বদলি করা হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে বদলির আদেশ দুবারই বাতিল করে ঢাকায় একই প্রকল্পে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাই আমি ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছি। এমনকি বর্তমানে আমিসহ প্রকল্পটিতে কর্মরত নারী কর্মীরা আশরাফুলের ভয়ে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় চাকরি করছি। বিষয়টিতে পৃথকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করে তদন্তভার ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করছেন। বিগত ৯ মাসেও এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এভাবে যদি তদন্তে কালক্ষেপণ করা হয় তাহলে ফৌজদারি আইনের সহায়তা নিতে বাধ্য হবেন বলে জানান লায়লা।

প্রকল্প পরিচালক সুজায়েত হোসেন বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। প্রকৌশলী প্রশাসন (তদন্ত) শরীফ উদ্দিন বলেন, আশরাফুল আলম কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছেন। এখন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত দেবেন।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন বলেছেন, অভিযোগের বিষয়টি আমি প্রশাসন বিভাগে যোগদানের পূর্বের ঘটনা। তবুও যেহেতু শ্লীলতাহানির অভিযোগ, তাই শিগগিরই তদন্তের কাজ সমাধা হওয়া উচিত ছিল। অভিযোগের বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিত জবাব দিয়েছি। এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এসব বিষয়ে চেষ্টা করেও এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম