রমজানে রাজধানীতে তৎপর মৌসুমি অপরাধীচক্র
ইকবাল হাসান ফরিদ
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
রোজা ও ঈদকে টার্গেট করে রাজধানী ঢাকায় সক্রিয় রয়েছে ডজন খানেক অপরাধীচক্র। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, প্রতারণাসহ নানা অপকর্মে সিদ্ধহস্ত এসব চক্রের সদস্যরা। তাদের ঠেকাতে মাঠে নানান বেশে সক্রিয় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন অপরাধী ধরা পড়েছেন।
রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই মানুষ ঈদ উপলক্ষ্যে কেনাকাটা করতে মার্কেটে ভিড় করতে শুরু করেন। আর এ সুযোগটা নেয় ছিনতাইকারী, পকেটমার, অজ্ঞান পার্টিসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র। এছাড়া ইফতারের পর এবং সেহরির আগে-পরে সক্রিয় থাকে ছিনতাইকারী, ডাকাতসহ বিভিন্ন চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রোজা ও ঈদকে টার্গেট করে অন্তত ১২ ধরনের অপরাধীচক্র সক্রিয় রয়েছে ঢাকায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু হয়েছে পহেলা রমজান থেকেই। রাজধানীর সব এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। কমিশনারের নির্দেশনায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে প্রতিদিন চলছে অভিযান। ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোয় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে তৎপর আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অপরাধ ঘটিয়ে যাতে কেউ পার না পায়, সেদিকে লক্ষ রেখে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে ঘটছে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। ধরাও পড়ছেন অপরাধীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, রমজান ও ঈদ টার্গেট করে রাজধানীতে হোটেল ভাড়া করে অবস্থান নিয়েছিল একটি চক্র। রমজানজুড়েই ছিনতাই ও ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল তাদের। চক্রের সদস্যরা ৬ মার্চ সকালে মতিঝিল এলাকায় ফাইন্যান্স টাওয়ারে অবস্থিত ল ফার্ম এবং মাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল ম্যানেজার শাহাদাতকে ডিবি পরিচয়ে পাকড়াও করেন। শাহাদাত তার ক্লায়েন্টের ৭১ লাখ টাকা জমা দিতে ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। ক্যাফে সুগন্ধা হোটেলের সামনে পৌঁছালে তাকে আটকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ৭১ লাখ টাকা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ সব লুটে নেয়। ওই ঘটনায় চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। সূত্র আরও জানায়, অপরাধীরা রিকশাচালকের ছদ্মবেশে বিভিন্ন বাসটার্মিনাল, ট্রেন ও লঞ্চটার্মিনালের পাশে অবস্থান নেয়। টার্গেট ব্যক্তিকে রিকশায় তুলে নিয়ে নিরাপদ স্থানে পুলিশের তল্লাশির নামে ছিনতাই করে তারা। সম্প্রতি এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের ডিসি মো. ফারুক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ব্যবসায়িক কাজে কিংবা কেনাকাটা করতে ঢাকায় আসেন। তাদের টার্গেট করে অপরাধীরা। এবার রোজা এবং ঈদ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি কমিশনার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর ৫০ থানার পুলিশ, ডিবি পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজমসহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা সক্রিয় থেকে কাজ করছেন। ছিনতাইকারীদের তালিকা ধরে ধরে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্পটে পুলিশের পাশাপাশি নারী পুলিশ সদস্যরাও ছদ্মবেশে কাজ করছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রমজানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ করে বাহারি নামের অপরাধীচক্র। এর মধ্যে রয়েছে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, থুতু পার্টি, ধাক্কা পার্টি, পা পাড়া পার্টি, ল্যাং মারা পার্টি, ঢিল পার্টি, হাফ প্যান্ট পার্টি, টানা পার্টি, ছোঁ মারা পার্টি, ডলার পার্টি, লাগেজ পার্টি প্রভৃতি।
এসব চক্রের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব-১-এর একটি দল ছিনতাইকারীচক্রের ৩২ সদস্যকে আটক করেছে। রাজধানীর বিমানবন্দর, বনানী, মহাখালী, ভাটারা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রাঘাত করে, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, গাড়ি, টাকাপয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার প্রভৃতি ছিনতাই করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। ১১ থেকে ১৮ মার্চ র্যাব-২-এর একাধিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, নাখালপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৩৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। র্যাব-২-এর সিনিয়র এএসপি শিহাব করিম বলেন, তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রমজানে ইফতার ও সেহরির পর বিভিন্ন স্থানে ওত পেতে থাকে অপরাধীরা। ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব স্থানে টহল জোরদার করা হয়েছে। র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। যারা এ ধরনের অপরাধ করছে বা জড়িত রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।