Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

জিইডি কোর্সকে এইচএসসির মান দিতে ফের তোড়জোড়

Icon

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জিইডি কোর্সকে এইচএসসির মান দিতে ফের তোড়জোড়

ভিয়েতনামে যুদ্ধের পর নাগরিকদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে চালু করেছিল জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (জিইডি) কোর্স। ওই যুদ্ধের সময়ই চার মাস মেয়াদি কোর্সটি মূলত চালু হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১০ সালে ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশে কোর্সটি চালু করে জিইডি সেন্টার। অনলাইনে আইএলটিএসের মতো পরীক্ষা দিয়ে জিইডি সার্টিফিকেট অর্জন করলে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের মর্যাদা দিয়েছিল আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এসএসসি পাশ করে এ কোর্সটি শেষ করলে এইচএসসি পরীক্ষা না দিয়েই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সে ভর্তিরও সুযোগ ছিল। আবার কেউ কেউ এক মাসেও কোর্সের সার্টিফিকেট নিয়ে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেতেন। নামসর্বস্ব এ জিইডি কোর্স নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পরে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ সনদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তখন সে সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর জিইডি কোর্স সম্পন্নকারীদের এইচএসসির সনদও দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। ২০১৮ সালে ইউজিসির উপপরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভীন স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জিইডি প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, চার মাস মেয়াদি জিইডি কোর্স শেষ করে স্নাতকে ভর্তি হওয়া যাবে না। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ জুলাইয়ের পর জিইডি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কোনো কোর্সে ভর্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। কমিশন থেকে এ সিদ্ধান্ত সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ফের কোর্সটি চালু করতে তোড়জোড় শুরু করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। তারা ইউজিসির কাছে এ কোর্সধারীদের এইচএসসির স্বীকৃতি দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করার সুযোগ দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কোর্সটি চালু হলে কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে লাভবান হলেও শিক্ষার মান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, জিইডি পাশ করা শিক্ষার্থীদের পুনরায় অনার্সে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। কারণ জিইডির সিলেবাসের কোনো বৈধতা নেই। আবার এইচএসসি কোর্স দুই বছর মেয়াদি আর জিইডি মাত্র চার মাসের। ফলে এটা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিতর্কের কারণে জিইডি কোর্সধারীদের এইচএসসির মান দেওয়া একবার বন্ধ করা হয়েছিল। আবার সেটি চালু হলে শিক্ষায় বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা আলোচনা-সমালোচনার কারণে ইউজিসি বিষয়টি অধিকতর যাচাই করে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই থেকে জিইডি ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তিযোগ্য বিবেচিত হবেন না বলে নির্দেশ দেয়। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর আরেক চিঠিতে জানায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে জিইডি কোর্সের প্রতিটি বিষয়ে ন্যূনতম ১৪৫ নম্বর অর্জন করলে কোনো শিক্ষার্থী এইচএসসি সনদপ্রাপ্ত হবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বা সমপর্যায়ে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করবেন। এরপর ২০২৩ সালে এসে ফের এ আদেশটি বাতিল করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। ওই আদেশে বলা হয়েছে, সমতুল্য সনদ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা বোর্ড কর্তৃক ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বরের পত্রটি বাতিল করা হলো। এছাড়া জিইডি কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের এইচএসসি সমমান সনদ দেওয়া হবে না বলেও ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইউজিসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জিইডি কোর্স সম্পন্নকারীদের অনার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার পক্ষে। সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য নথি উঠানো হয়েছে। তবে এ নথিতে গোপন রাখা হয়েছে ঢাকা বোর্ডের সর্বশেষ জিইডি কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের এইচএসসি সমমানের সনদ দেওয়া হবে না সংক্রান্ত চিঠিটি। আগের চিঠি দেখিয়ে ভর্তি অনুমতি দেওয়ার চিন্তা করছেন তারা। বর্তমানে নথিটি রয়েছে ইউসিজির চেয়ারম্যানের দপ্তরে। এবার এ কোর্সটি ভিন্ন মোড়কে হাজির করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আবার অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও এ কোর্স সম্পন্নকারীদের ভর্তি করা নিয়ে বেশ আগ্রহী। এতে শিক্ষার্থী বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, জিইডি কোনো বৈধ কারিকুলাম নয়। আর জিইডি পাশকে এইচএসসির সমমান ধরা হলেও তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এইচএসসি কোর্স দুই বছর মেয়াদি আর জিইডি মাত্র চার মাসের ডিপ্লোমা কোর্স। এ কারণে এটিকে সমমান বলা যাবে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, জিইডিকে এইচএসসি ও সমমানের মর্যাদা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো বিদ্যমান। ইউজিসির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জিইডিকে এইচএসসির সমমান দিচ্ছি না। তাদের ওই চার মাসের কারিকুলাম আমাদের দুই বছরের কারিকুলামের সঙ্গে শর্ট কোর্স নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জিইডিকে এইচএসসির মান দেওয়ার কোনো যৌক্তিক গ্রাউন্ড নেই। ইউজিসি ফের জিইডি উত্তীর্ণদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে। আপনারা এ বিষয়ে জানেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউজিসি আমাদের কোনো চিঠি দেয়নি।

ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান যুগান্তরকে বলেন, জিইডিকে এইচএসসির মর্যাদা দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। এটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিষয়। জিইডিকে মান দিয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ দেওয়ার কোনো প্রস্তাব ইউজিসিতে এসেছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ফাইল আমার কাছে আসেনি। আমরা জিইডি কোর্সধারীদের স্নাতক করার সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তে আছি।

ইউজিসির চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্বে) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, জিইডিকে এইচএসসির মান দেওয়ার প্রস্তাব আমার কাছে আসেনি। আমি এ বিষয়ে জানি না। জিইডিকে এইচএসসির মান না দেওয়ার পক্ষে আমাদের সিদ্ধান্ত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম