Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

শেষ হয়নি বাঁধের কাজ

হাওড়ে এবারও হুমকির মুখে বোরো ফসল

দুর্নীতির অভিযোগ আতঙ্কে কৃষক

Icon

কামাল হোসাইন, নেত্রকোনা

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাওড়ে এবারও হুমকির মুখে বোরো ফসল

নেত্রকোনায় হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার ও নির্মাণকাজ এখনো ১৮ শতাংশ বাকি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নীতিমালা অনুযায়ী আজ শতভাগ কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এদিকে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার চরহাইজদা বাঁধের অন্তত ২২টি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে এসব জায়গায় অপ্রয়োজনীয় স্থানে প্রকল্প নেওয়া, বাঁধে কম মাটি কেটে পুরো কাজ দেখানোসহ বেশকিছু অনিয়ম আনা হয়েছে।

জেলার সাত উপজেলার ১৩৪টি হাওড়ে এবারও হুমকির মুখে রয়েছে বোরো ফসল। যদিও স্থানীয় পাউবোর দাবি, জেলার ১৫২টি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্পের কাজের গড় অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। এদিকে সময়মতো হাওড় রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় বছরের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে হাওড়াঞ্চলের চাষিদের।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, এ বছর হাওড়ের পানি দেরিতে নেমেছে। জাতীয় নির্বাচন, তীব্র শীতের কারণেও কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

২০১৭ সালে আগাম বন্যায় হাওড়াঞ্চলে ফসলহানির পর নতুন নিয়মানুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাজে সরাসরি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারকিতে সরাসরি জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করে জেলা কমিটি এবং প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও পাউবোর উপজেলা পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। মূলত উপজেলা কমিটি প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করে জেলা কমিটিতে পাঠায়। পরে জেলা কমিটি তার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি পিআইসি থাকে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কমিটিতে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পছন্দের লোকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রভাশালী লোকজন বছরের পর বছর নিজস্ব লোকজন দিয়ে কমিটি করে এসব বাঁধের কাজ করে থাকেন। একই প্রকল্পে প্রতি বছর অল্প পরিমাণ কাজ করেই নির্ধারিত বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়। দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দেওয়া হয় প্রকল্প। সঠিক তদারকি না হওয়ায় একদিকে যেমন সরকারের টাকা অপচয় হয়, অন্যদিকে মান অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় ঝুঁকিতে থাকে একমাত্র ফসল।

স্থানীয় পাউবো সূত্র জানায়, হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা শেষ করার কথা। এর আগে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন এবং ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু পানি ধীরগতিতে নামায় প্রকল্প নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত করতে দেরি হয়। পিআইসি গঠিত হলেও হাওড়ের পানি না নামার কারণে নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি কাজ।

জেলা পাউবো সূত্র আরও জানায়, জেলায় পাউবোর অধীন প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সেলিম মিয়া বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি কথাটা ঠিক নয়। প্রায় ৯৮ শতাংশ প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ শেষ। মদনের ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়াও প্রায় একই কথা জানান। জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, কাজের গড় অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। পানি নামতে দেরি হওয়ায় কিছু বাঁধে কাজ শুরু ও শেষ করতে সময় লেগেছে। জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, কয়েকটি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ শেষ হতে আরও পাঁচ-সাত দিন লাগতে পারে। কাজ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম