Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

তিন যমজ ভাইয়ের মেডিকেল কলেজে পড়ার স্বপ্নপূরণ

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তিন যমজ ভাইয়ের মেডিকেল কলেজে পড়ার স্বপ্নপূরণ

মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া বগুড়ার ধুনটের তিন ভাই মাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান মায়ের সঙ্গে -যুগান্তর

বগুড়ার ধুনটের তিন যমজ ভাইয়ের মধ্যে বাকি দুজনও এ বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগে পেয়েছেন। তাদের ভাই মাফিউল হাসান গত বছরই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এবার সাফিউল হাসান দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও রাফিউল হাসান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন। ত্রয়ী ভাই চিকিৎসক হতে যাচ্ছেন, এমন খবরে শুধু ওই উপজেলা নয়, জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার ধুনটের সদর ইউনিয়নের বথুয়াবাড়ি গ্রামের স্কুল শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ও গৃহিণী আর্জিনা বেগম দম্পতির পরিবারে ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর ত্রয়ীর জন্ম হয়। সাফিউল হাসান সাফি, মাফিউল হাসান মাফি ও রাফিউল হাসান রাফি ছাড়াও তাদের সংসারে আরেক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। ২০০৯ সালে তাদের বাবা স্থানীয় মাঠপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মা আর্জিনা বেগম স্বামীর রেখে যাওয়া ৫-৬ বিঘা জমি ও বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেই সন্তানদের ভরণপোষণ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিন ভাই ধুনট নবীর উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। গত বছর তিন ভাই মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মাফিউল হাসান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হন। প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ায় সাফিউল হাসান ও রাফিউল হাসান কঠোর পরিশ্রম করেন। এবার তারা দিনাজপুর ও নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। 

রত্নগর্ভা মা আর্জিনা বেগম বলেন, মাত্র ৫ বছর বয়সে ছেলেমেয়েরা বাবাকে হারিয়েছে। তারা বাবার স্নেহ ও ভালোবাসা পায়নি। স্বামীর রেখে যাওয়া ও বাপের বাড়ির থেকে পাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ছেলেদের ডাক্তার বানাতে প্রয়োজনে আর যা আছে তাও বিক্রি করবেন। সন্তানরা ডাক্তার হয়ে যাতে আমাদের মতো গরিব মানুষের সেবা করতে পারে সে দোয়া করি।

ধুনট নবীর উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি তিন ভাই যখন স্কুলে আসে তখন তাদের মেডিকেল কলেজে ভর্তির বিষয়টি জানতে পারেন। তারা মিষ্টি নিয়ে এসে দোয়া চেয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, তার ছাত্ররা মেডিকেল ভর্তি হওয়ায় শুধু তিনি নন; পুরো এলাকার মানুষ গর্বিত। গত বছর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া মাফিউল হাসান মাফি জানান, তারা তিন ভাই বগুড়ায় মেসে থেকে সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে পড়েছেন। মা অনেক কষ্ট ও জমিজমা বিক্রি করে তাদের পড়িয়েছেন। 

তিনি বলেন, তিন ভাই একসঙ্গে ডাক্তার হব ভাবতে অনেক ভালো লাগছে। এবার দিনাজপুর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শাফিউল হাসান জানান, ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। মা তাদের বড় করে তুলেছেন। বাবা থাকলে অনেক খুশি হতেন। 

তিনি চিকিৎসক হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারেন সে দোয়া চান। নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া রাফিউল ইসলাম বলেন, বড় হয়ে বাবার হৃদরোগে মৃত্যুর কথা জেনেছেন। তখন তিন ভাই ডাক্তারি পড়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনি ডাক্তার হয়ে দরিদ্র মানুষের সেবা করবেন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম