আট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
যশোরে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তোড়জোড়
কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বর্তমান চেয়ারম্যানরা

ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যশোরের আট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তে নির্বাচনের সমীকরণ বদলে গেছে। স্থানীয় সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘিরে নতুন বলয়ে প্রার্থীরা সক্রিয় হচ্ছেন। নানা কারণে বর্তমান চেয়ারম্যানরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। দলীয় প্রতিপক্ষের কঠোর বিরোধিতার মুখে তাদের পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সর্বশেষ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি উপজেলায় নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জয়ী হন। তারা হলেন-চৌগাছায় মোস্তানিছুর রহমান, শার্শায় সিরাজুল হক মঞ্জু, মনিরামপুরে নাজমা খানম, অভয়নগরে শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর, বাঘারপাড়ায় ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী ও সদরে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। আর কেশবপুরের কাজী রফিকুল ইসলাম ও ঝিকরগাছার মনিরুল ইসলাম নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। তাদের প্রত্যেককে এবার দলীয় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে। অনেকের বিজয়ী হওয়া আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
যশোর সদর উপজেলায় মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে এবার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, যুব মহিলা লীগের নেত্রী ফাতেমা আনোয়ার ছাড় দিতে নারাজ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার-ফেস্টুন ও গণসংযোগের মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন।
চৌগাছা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তানিছুর রহমানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ একাধিক প্রার্থী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গত নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম হাবিবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে লড়বেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। অনেকে গণসংযোগ করছেন নিয়মিত।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামকে লড়তে হবে দলের শক্তিশালী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে আছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আলী রায়হান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল। চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া উচিত নয়। মাঠ উন্মুক্ত থাকুক। যার জনপ্রিয়তা আছে, জনগণ তাকে নির্বাচিত করুক। জনপ্রিয় নেতাদের কাছে দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন সহজ।
শার্শা উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জুর বিরুদ্ধে লড়বেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা যুবলীগের নেতা অহিদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব উদ্দিন, হাসান ফিরোজ টিংকু, হাদিজ্জামান প্রমুখ।
মনিরামপুর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমা খানমের সামনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। এ উপজেলায় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় আসন্ন উপজেলায় নয়া সমীকরণ তৈরি হয়েছে। লড়তে চান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, বর্তমান সংসদ-সদস্য ইয়াকুব আলীর ভাই অলিয়ার রহমান, কামিয়ার রহমান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব খান। চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় এবার দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। বিজয়ী হতে সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এতে পেশি শক্তি, ক্ষমতার দাপটসহ নানা রকমের চেষ্টা থাকবে। বিজয়ী হওয়া সবার জন্যই কঠিন হবে।
কেশবপুর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তিনি জয়ী হন। এবার তাকে একাধিক দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা সাদেক, দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি সৈয়দ নাহিদ হাসান প্রমুখ মাঠে রয়েছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী উপনির্বাচনে বিজয়ী হন। তার স্বামী নাজমুল ইসলাম কাজলের মৃত্যুতে পদটি শূন্য হয়। এবার শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবীর বিপুল ফারাজি, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রউফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজীব রায় প্রমুখ মাঠে আছেন।
অভয়নগর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীরকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। শ্রমিক নেতা রবিন অধিকারী ব্যাচা, ভাইস চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান তারু আগামী নির্বাচনে লড়বেন বলে শোনা যাচ্ছে।