সিন্ডিকেটের কবলে বাজার
হাত বদলেই বাড়ে দাম, ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা
মাহবুব রহমান, রংপুর
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাজারে চড়া দামে সবজি বিক্রি হলেও পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সবজি বাজার সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাওয়ায় শীতকালীন সবজি অনেকগুণ বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। হাতবদল হলেই সবজির দাম বেড়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানায়, সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় খেত থেকে উত্তোলন করেই কৃষকদের সবজি বিক্রি করতে হয়। এ কারণে তারা ন্যায্য দাম পান না। তারা আরও জানান, এবারে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এবং সিন্ডিকেটের কারণে সবজির দাম চড়া।
রংপুর অঞ্চলে সবজি উৎপাদনে মিঠাপুকুর উপজেলা বিখ্যাত। এরপরেই পীরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় বেশি সবজি চাষ হয়। এছাড়া রংপুর সদরের সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়ন সবজির জন্য বিখ্যাত। এলাকাগুলোয় প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এবং স্থানীয় বাজার ব্যবস্থার অভাবে ন্যায্যমূল্য থেকে বেশিরভাগ চাষি বঞ্চিত হন।
মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর, জায়গীরহাট, লতিপবপুর, শুকুরেরহাট, ময়েনপুর, কাফ্রিখাল, আলিপুর, বালারহাট, রংপুর সদরের পালিচড়া, জানকি ধাপেরহাট, শ্যামপুর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর, এসকেএস বাজার, লক্ষ্মীটারি, গজঘণ্টাসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, মরিচ, শিম, গাজর, করলা, মুলা, বেগুনসহ শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। সবজি খেত পরিচর্যায় কৃষক-কৃষাণীদের ব্যস্ত সময় কাটছে। কেউ খেত থেকে ফসল তুলছেন, কেউ পরিচর্যা ও কেউ সবজি ক্ষেতে স্প্রে করছেন। কারও দম ফেলার সময় নেই।
এসব উৎপাদিত সবজি প্রতিদিন ট্রাকে রাজধানী ঢাকার প্রধান কাঁচামালের আড়ত কাওরান বাজারসহ খুলনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে যাচ্ছে। তবে নানা অজুহাতে এক শ্রেণির লোক (পাইকার) সিন্ডিকেট করে চাষির কাছ থেকে কম দামে শাক-সবজি কিনছেন। শুধু হাত বদল করেই পাইকাররা লাভবান হচ্ছে। আর ভোক্তাদের অনেকগুণ বেশি দামে সেই সবজি কিনতে হচ্ছে। কৃষকরা জানান, সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তারা কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে ভরা মৌসুমে তারা খুব একটা দাম পান না। অনেক সময় উৎপাদন খরচই ওঠে না। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে সবজি অনেকগুণ বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
রংপুর সিটি বাজার, কামাল কাছনা, লালবাগ, মডার্ন মোড়, মাহিগঞ্জ ও সাতমাথা, টার্মিনাল বাজারসহ মিঠাপুকুর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার এলাকায় ঘুরে জানা যায়, মুলা কৃষক পর্যায়ে ২-৩ টাকা কেজি, পাইকারিতে ৫-৭ টাকা, আর ভোক্তা পর্যায়ে ২০ টাকা। পাতা কপি কৃষক পর্যায়ে ১০ টাকা, পাইকারিতে ১৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ২০ টাকা, ফুলকপি কৃষক পর্যায়ে ২০ টাকা, পাইকারি ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁয়াজ কৃষক পর্যায়ে ৫০ টাকা, পাইকারিতে ৬০-৬৫ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।
কাঁচা মরিচ কৃষক পর্যায়ে ৪০ টাকা, পাইকারিতে ৫০ টাকা, ভোক্তা পর্যায়ে ৬০ টাকা, ঢোপা বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪৫ টাকা, পাইকারিতে ৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৮০ টাকা, চিকন বেগুন কৃষক পর্যায়ে ৪০-৪৫ টাকা, পাইকারিতে ৫৫-৬০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো কৃষক পর্যায়ে ২০ টাকা পাইকারিতে ৩০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা, পাইকারিকে ২০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা, শিম কৃষক পর্যায়ে ২৫ টাকা পাইকারিতে ৩৫-৪০ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিঠাপুকুরের লতিফপুর বউবাজার এলাকার চাষি মজনু মন্ডল জানান, দুই বিঘা জমিতে তিনি বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। জমি তৈরি, বীজ, সার, কীটনাশকের জন্য বিঘাপ্রতি প্রায় ২৫ হাজার টাকার বেশি তার খরচ হয়েছে। যে দামে সবজি বিক্রি করি তাতে লাভ তেমন হয় না। রংপুর সিটি বাজারে ক্রেতা আমিনুল ইসলাম ও হুমায়ুন রশিদ শাহীন জানান, কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে চড়া দামে বিক্রি করছেন পাইকাররা।
এ ব্যাপারে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, সবজি মানেই পচনশীল পণ্য। সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় খেত থেকে উত্তোলন করেই বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। এজন্য সমস্যাও হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও তিনি জানান।