Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

রংপুরে আলুর বাম্পার ফলন

ঘন কুয়াশার কারণে লেট ব্লাইটের শঙ্কা

দুশ্চিন্তায় কৃষক

Icon

মাহবুব রহমান, রংপুর

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘন কুয়াশার কারণে লেট ব্লাইটের শঙ্কা

রংপুর অঞ্চলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। এ কারণে উচ্ছ্বসিত চাষিরা। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে আলুতে লেট ব্লাইট রোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। এই রোগ প্রতিরোধে কৃষি বিভাগ আগাম প্রস্তুতি হিসাবে চাষিদের পরিমিত স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে।

রংপুর নগরীর তামপাট, মাহিগঞ্জ, তপোধন, রাজেন্দ্রপুর, দর্শনা, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ, লতিবপুর, রানীপুকুর ও পীরগাছার নাগদহ, দেউতি, পারুল, ছাওলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা আলু খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ স্প্রে করছেন আবার কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন। তবে আলুর খেত দেখে মন ভালো হলেও অজানা শঙ্কায় চাষিরা। নিয়মিত কুয়াশা কাটাতে স্প্রে করায় তাদের খরচ বাড়ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো ভরা আলুর মাঠ রক্ষা করে চলেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুরের পাঁচ জেলায় এ বছর চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। তবে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া নীলফামারী জেলায় ২১ হাজার ৯৯০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১১ হাজার ১৫২ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় ৭ হাজার ৭৫ হেক্টর ও লালমনিরহাট জেলায় ৬ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, এই অঞ্চলের আলুচাষিরা এবার আগেভাগেই দ্রুত বর্ধনশীল জাতের গ্রানোলা, লরা, মিউজিকা, ক্যারেজ, রোমানা ও ফাটা পাকরি চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে রংপুরে এবং সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। আসছে মার্চের শেষের দিকে আলু উত্তোলন শেষ হবে।

কৃষকরা জানান, গত বছরে আলুর ভালো দাম আর এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এখন আলুখেতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এরই মধ্যে আগাম জাতের আলু ঘরে তোলার কাজ শুরু করেছেন অনেকেই। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রংপুর নগরীর তামপাট এলাকার নুর ইসলাম ও ইছার আলী জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আগাম কিছু আলু বিক্রি করে দামও ভালো পেয়েছেন। তবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় আলুখেতে রোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন।

পীরগাছা উপজেলার হাউদারপাড় এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেভাবে শীত বাড়ছে, তাতে চাষাবাদ করা মুশকিল। সার, বীজ, সেচ সব কিছুর দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে দিনমজুরও পাওয়া যায় না। ধার-দেনা করে আলু চাষ করছি। কিন্তু শীতের কারণে যদি আলুর পচারি রোগ হয় তাহলে লোকসানের বোঝা বইতে হবে।

পীরগাছা উপজেলার পাওটানা ছাওলা চরে আলু চাষ করেছেন সাঈদি আহমেদ সোহাগ ও আজগর আলী। তাদের বাড়ি নগরীর মাহিগঞ্জ বড় রংপুর এলাকায়। তারা প্রতিবছর ওই এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেন। তারা জানান, এবার আলুর মৌসুমের শুরুতে বীজ আলু ও সার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা ছিল। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না।

কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আলুখেতের জন্য সবচেয়ে বেশির শঙ্কার কারণ ঘন কুয়াশা। কুয়াশা দীর্ঘদিন থাকলে আলুর মধ্যে লেট ব্লাইট হতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে আলুচাষিদের নিয়মিত আগাম প্রস্তুতি হিসাবে কৃষকদের পরিমিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম