আবদুল্লাহর আবিষ্কার
রেললাইন কাটলে অ্যালার্ম বাজবে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে
মো. শহীদুল হক সরকার, নাটোর
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রেললাইন কেটে ফেলা হলে বা ভেঙে গেলে সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে বেজে উঠবে অ্যালার্ম। একই সঙ্গে কল আসবে স্টেশন মাস্টারের মোবাইল ফোনেও। এমন একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর জোয়ানপুরের মাহবুব আলমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি। কাফি পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার দাবি, মাত্র ২০ হাজার টাকায় এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের নিরাপত্তা দেবে তার এ ডিভাইস। সম্প্রতি গাজীপুরে রেললাইন কেটে ফেলায় ঘটা ভয়াবহ দুর্ঘটনা তার মনে দাগ কাটে। রেললাইনকে নিরাপদ করতে তাই প্রযুক্তি আবিষ্কারের চিন্তা মাথায় আসে তার।
আব্দুল্লাহ আল কাফি জানান, প্রতিটি স্টেশনে একটি কন্ট্রোল বক্স স্থাপন ও রেললাইনের সঙ্গে ওয়ারিংয়ে খরচ পড়বে মাত্র ২০ হাজার টাকা। ওই স্টেশনের আওতায় রেললাইন কাটা পড়লে বা ফেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল বক্সের অ্যালার্ম বাজবে। একই সঙ্গে অ্যালার্ম বাক্সে থাকা মোবাইল থেকে স্টেশন মাস্টারের মোবাইল ফোনে যাবে কল।
বিষয়টি জেনে রোববার রাতে এর আবিষ্কারকের খোঁজ নেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী রুহুল আমিন প্রযুক্তি আবিষ্কারক আব্দুল্লাহ আল কাফির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, রোববার রাতে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে রুহুল আমিন প্রযুক্তির বিষয়ে যাবতীয় খোঁজ নেন। পরে তিনি আবার যোগাযোগ করবেন বলে জানান। রুহুল আমিন জানান, বিষয়টি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নজরে আসার পর তাকে খোঁজ নিতে বলেন। প্রতিমন্ত্রী কাফির সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, ‘ডিভাইসটি তৈরি করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছি আমি। এটার কাজ হলো স্বাভাবিক রেললাইন কখনো যদি ফেটে যায় বা রেললাইন আলাদা হয়ে যায়, তাহলে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত দিতে থাকবে। সেই সঙ্গে স্টেশন মাস্টারের মোবাইল ফোনে কল যাবে।’ তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে সেফটি ডিভাইস’টি তৈরি করতে আমার ১০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। তবে এটা যদি পরিপূর্ণভাবে রেলের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে হয়, তাহলে আরেকটু বড় করে স্থাপন করতে হবে?। সেক্ষেত্রে হয়তো এটার খরচ পড়বে ২০ হাজার টাকা।
আব্দুল্লাহর বাবা মাহবুব আলম জানান, সন্তানের এমন আবিষ্কারে তিনি গর্বিত। তিনি বলেন, আমার ছেলের আবিষ্কার দেশের ও জনগণের কাজে লাগবে, এটা ভাবতেই আমার অনেক খুশি লাগছে। পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সানজিদুল হক ফাহিম বলেন, আব্দুল্লাহর এ আবিষ্কারে একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও নাটোরের মানুষ হিসাবে খুবই গর্ব অনুভব করছি।
মাধনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার আবদুল্লাহ তার অবিষ্কার দেখাতে তার বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পেরে যন্ত্রটি দেখতে আবদুল্লাহর বাড়িতে ভিড় করছে। রেলযাত্রাকে নিরাপদ করতে আবদুল্লাহর আবিষ্কারকৃত যন্ত্রটি সত্যিই কার্যকরী কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান আকরামুল হক বলেছেন, বিষয়টি এখনো তার জানা নেই। তিনি আজই খোঁজ নিয়ে আবদুল্লাহর আবিষ্কারকৃত যন্ত্রটি কতটা কার্যকরী, তা পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন।