Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ইউএসবাংলায় চাকরি করছেন লাপাত্তা বিমান কর্মকর্তা

এনওসি ছাড়া লোক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিমান * বিমানের গোপনীয় তথ্য অন্য এয়ারলাইন্সের কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করেছেন কিনা খতিয়ে দেখবে পুলিশ

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইউএসবাংলায় চাকরি করছেন লাপাত্তা বিমান কর্মকর্তা

লাপাত্তা দুই বিমান কর্মকর্তার মধ্যে একজন গোপনে সংস্থার প্রতিদ্বন্দ্বী বিমান সংস্থা ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সে চাকরি করছেন। তার নাম সোহান আহম্মেদ। তিনি বিমানের খুবই স্পর্শকাতর বিভাগ ও টেকনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে রক্ষিত ছিল বিমানের কাস্টমার সার্ভিস, মার্কেটিং ও প্রশাসন শাখার একাধিক গোপনীয় চুক্তি ও আরআই পলিসি (রেসপন্সিবল ইনভেস্টমেন্ট পলিসি)। 

বিমান কোন কোন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে, এসব রুটের বিনিয়োগ, ফ্লাইট সংখ্যা, যাচাই-বাছাই রিপোর্ট ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বিমানের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের কার্যবিবরণসহ অনেক গোপনীয় তথ্য সংরক্ষণ করতেন সোহান আহমেদ ও আনোয়ার হোসেন

এদিকে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে কোনো ধরনের অনাপত্তি সনদ (এনওসি) ছাড়া বিমানের একজন টেকিনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন স্পর্শকাতর তথ্যসমৃদ্ধ কর্মকর্তাকে নিয়াগ দেওয়ায় ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে চটেছে বিমান। 

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বৃহস্পতিবার ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেন। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেওয়া চিঠিতে বিমানের এমডি বলেন, সোহান আহম্মেদের নিয়োগটি সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। তিনি অবিলম্বে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সকে জানান।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৬ সালে ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্স বিমানের বিরুদ্ধে একটি রিট মামলা করে। ওই মামলায় বলা ছিল এয়ারলাইন্সে কর্মরত পাইলট ও ইঞ্জিনিয়াররা অন্য এয়ারলাইন্সে চাকরি গ্রহণের পূর্বে নিয়োগকারী এয়ারলাইন্স থেকে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) গ্রহণ করতে হবে। 

২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর মামলাটির রায় হয়। উক্ত রায় অনুযায়ী অনাপত্তি সনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেখা গেছে বিমানের কর্মকর্তা সোহান আহম্মেদ ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সে যোগদানের পূর্বে বিমানের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে কোনো ধরনের অনাপত্তিপত্র নেয়নি। তারপরও ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্স কিভাবে এবং কেন সোহানকে নিয়োগ দিল তা রহস্যজনক।

এদিকে সোহান আহম্মেদ ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সে কোন মাসে এবং কোন বিভাগে যোগদান করেছে সেটা চিঠিতে উল্লেখ ছিল না। তবে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে সোহান বিমানে যে পদে ছিলেন ওই বিভাগের আরও সিনিয়র কর্মকর্তা পদে তিনি যোগদান করেছেন। বিমানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেতন তিনি পাচ্ছেন সেখানে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, তারা সোহান আহম্মেদকে নজরে রেখেছেন। তিনি যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সোহানকে গ্রেফতার করতে পারলে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা এভাবে বিমানের স্পর্শকাতর তথ্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্স, ভেন্ডর ও ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের কমিশন আয় করে আসছেন। 

এরসঙ্গে বিমানের একজন প্রভাবশালী পরিচালকের নামও তারা জানতে পেরেছেন। ওই পরিচালক কিছুদিন আগে বিমানের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগেও ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠে শাহজালালে কর্মরত বিমানের এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া জেনারেল ম্যানেজার ও লাপাত্তা অপর বিমান কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। 

চাঞ্চল্যকর প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও ওই পরিচালকের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পরিচালক গোপনে বিমানের অবর্তমানে সোহান আহম্মেদকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিতে পারেন। যার মাধ্যমে সোহান ইউএসবাংলায় যোগদান করেছেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এই সিন্ডিকেট গোপনে শাহজালাল থেকে বিমানের খাবারের গাড়িতে স্বর্ণ চোরাচালান করতেন। জানা গেছে, সিন্ডিকেটের মূল সদস্য আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিএফসিসি থেকে খাবার এনে ট্রানজিট যাত্রীদের খাওয়ানো হতো। এরপর খাবারের উচ্ছিষ্ট, ময়লা ও প্যাকেটের মধ্যে সোনার বার ভরে ময়লার গাড়িতে সেই চালান বাইরে পাচার করতেন।

বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের উচিত অবিলম্বে সোহানকে গ্রেফতার করা। এরপর রিমান্ডে এনে ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের কাছে কোনো গোপনীয় তথ্য বিক্রি কিংবা দিয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম