খুলনার ছয়টি আসন
নৌকা হেরেছে ১০৭ কেন্দ্রে
৫০০ কেন্দ্রে ভোট পাননি ২৩ প্রার্থী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করলেও ৭৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টিতে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন। আসনগুলোয় ৩৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ২৩ জন ৫০৫টি কেন্দ্রে কোনো ভোট পাননি। ৩০ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতা হওয়ায় এবং স্থানীয় আধিপত্যের কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। নৌকার প্রার্থীরা খুলনা-৪, খুলনা-৫ এবং খুলনা-৬ আসনে হেরেছেন। এর মধ্যে খুলনা-৫ আসনের ১৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে নৌকার প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ হেরেছেন ৬০টি কেন্দ্রে, খুলনা-৪ আসনে ১১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী ৩৬টি কেন্দ্রে এবং খুলনা-৬ আসনে ১৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে নৌকার প্রার্থী রশীদুজ্জামান ১১টি কেন্দ্রে হেরেছেন। অন্যদিকে নতুন রাজনৈতিক দল, প্রচার-প্রচারণার অভাব, নেতাকর্মী না থাকাসহ নানা কারণে প্রার্থীরা অনেক কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছেন।
ছয়টি আসনের কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, খুলনা-৫ আসনের হাজিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে। এ কেন্দ্রে ১ হাজার ৯১৮ ভোটের মধ্যে ১ হাজার ৬০০ ভোটার ভোট দিয়েছেন, যা শতকরা ৮৩ দশমিক ৪২ ভাগ। খুলনা-৬ আসনের ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সব থেকে কম ভোট পড়েছে। এখানে ৩ হাজার ৯৯৭ জন ভোটারের মধ্যে ৬১১ জন ভোট দিয়েছেন, যা শতকরা ১৫ দশমিক ২৯ ভাগ।
একাধিক কেন্দ্রে শূন্য ভোট পাওয়া প্রার্থী ২৩ জন। ৫০৫টি কেন্দ্রে তারা কোনো ভোট পাননি। তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন। শূন্য ভোট পাওয়ার বিষয়ে একাধিক ভোটার জানান, অনেক দলের নাম ভোটের সময় তারা শুনেছেন। এছাড়া অনেক রাজনৈতিক দলের কোনো কর্মকাণ্ড নেই, প্রচার-প্রচারণাও তেমন করেনি। এমনকি এসব দলের অফিস, কর্মী বা নেতাও নেই।
খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) আসনে ১১০টি কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক শূন্য ভোট পেয়েছেন কামিনীবাসিয়া জিএল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। খুলনা-২ (সোনাডাঙ্গা-সদর) আসনের ১৫৭টি কেন্দ্রের মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী দেবদাস সরকার ১৮টি কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায় ৩৪টি কেন্দ্রে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আবদুল্লাহ আল আমিন চারটি কেন্দ্রে এবং গণতন্ত্রী পার্টির মতিয়ার রহমান পাঁচটি কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছেন। খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনের ১১৬টি কেন্দ্রে কোনো প্রার্থী শূন্য ভোট পাননি।
খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে ১৩৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬টিতে নৌকা হেরেছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজভী আলম ১০টি কেন্দ্রে, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান একটি কেন্দ্রে, তৃণমূল বিএনপির হাবিবুর রহমান ৪০টি কেন্দ্রে, স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম রওশান জামিন ৪৫টি কেন্দ্রে, স্বতন্ত্র প্রার্থী এমডি এহসানুল হক ৪৩টি কেন্দ্রে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এসএম আজমল হোসেন ৪০টি কেন্দ্রে, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা ৬৯টি কেন্দ্রে, স্বতন্ত্র প্রার্থী জুয়েল রানা ২৭টি কেন্দ্রে, জাতীয় পার্টির ফরহাদ আহমেদ ১৬টি কেন্দ্রে এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ৪৫টি কেন্দ্রে কোনো ভোট পাননি।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের ১৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টি কেন্দ্রে নৌকার পরাজয় হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের এসএমএ জলিল ২৬টি কেন্দ্রে, জাতীয় পার্টির শাহীদ আলম পাঁচটি কেন্দ্রে এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার সাতটি কেন্দ্রে কোনো ভোট পাননি। খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের ১৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে নৌকা হেরেছে ১১টি কেন্দ্রে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এসএম নেওয়াজ মোরশেদ তিনটি কেন্দ্রে, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম ১৭টি কেন্দ্রে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু সুফিয়ান ছয়টি কেন্দ্রে, তৃণমূল বিএনপির নাদির উদ্দিন খান ৩৮টি কেন্দ্রে এবং জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু পাঁচটি কেন্দ্রে কোনো ভোট পাননি।
উল্লেখ্য, খুলনা-১ ননী গোপাল মন্ডল, খুলনা-২ সেখ সালাউদ্দিন, খুলনা-৩ এস এম কামাল হোসেন, খুলনা-৪ আব্দুস সালাম মুর্শেদী, খুলনা-৫ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং খুলনা-৬ আসনে রশীদুজ্জামান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন।