Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

মহিববুরের মন্ত্রিত্বে সাগর পারে আনন্দের বন্যা

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মহিববুরের মন্ত্রিত্বে সাগর পারে আনন্দের বন্যা

শেষপর্যন্ত দুজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েছে বরিশাল বিভাগ। বরিশাল সদর ও পটুয়াখালীর সংসদ-সদস্য তারা। এ নিয়ে দুই জায়গাতেই চলছে আনন্দ-উল্লাস। বরিশাল সদর আসনের এমপি জাহিদ ফারুক শামিম দ্বিতীয়বারের মতো পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মহিববুর রহমানকে। প্রতিমন্ত্রী পাওয়া নিয়ে বরিশাল সদর আর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী-কলাপাড়ায় উল্লাস চললেও ভিন্ন চিত্র পিরোজপুরে। এখানকার একজন পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন সদ্য সাবেক মন্ত্রিসভায়। এবার আর তা জোটেনি ভাগ্যে। ফলে বেশ হতাশ সেখানকার মানুষ।

৯০ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি পেলেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জোটেনি বরিশাল সদরের ভাগ্যে। দক্ষ-যোগ্য এমপি থাকলেও কাউকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করেনি তৎকালীন বিএনপি সরকার। ৯৬ পরবর্তী সময়েও ছিল একই পরিস্থিতি। ২০১৮ সালের পর কাটে দুর্ভাগ্যের এই অচলায়তন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে এমপি হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। প্রথমবার এমপি হওয়া শামিমকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহু বছর পর নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধির গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেখেন বরিশালের মানুষ। ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে নির্বাচনি জনসভায় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের কর্মদক্ষতা আর সততা নিয়ে প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তখনই সবাই বুঝে গিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে আবারও পতাকাবাহী গাড়িতে চড়বেন জাহিদ ফারুক। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিপুল ভোটে দ্বিতীয়বার এমপি হন জাহিদ ফারুক। নয়া মন্ত্রিপরিষদে পুনরায় তাকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাহিদ ফারুক যে প্রতিমন্ত্রী থাকছেন সে খবর বুধবারই ছড়িয়ে পড়ে বরিশালে। সেই সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় চলে মিষ্টি বিতরণ

নৌকার নির্র্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য, বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. লস্কর নূরুল হক বলেন, যোগ্য লোককে যথাযথ সম্মান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমবার এমপি হওয়ার পর নির্বাচনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন জাহিদ ফারুক। কীর্তনখোলার ভাঙন প্রতিরোধেও পালন করেছেন ভূমিকা। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক কিছু জটিলতার কারণে বিগত সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনার সবটুকু বাস্তবায়ন করতে পারেননি জাহিদ ফারুক। তবে আল্লাহর রহমতে এবার সেই জটিলতা নেই। প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের এমপি হিসাবে আরও অনেক বেশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনি করবেন সেই প্রত্যাশা আমাদের।

প্রতিমন্ত্রী পেয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি সাগর পাড়ের কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী এলাকার মানুষ। এই নির্বাচনি এলাকা অর্থাৎ পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মহিববুর রহমান। এর আগে দশম জাতীয় সংসদে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এই আসনের তৎকালীন এমপি মাহবুবুর রহমান। প্রতিমন্ত্রী হলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে দুদক। এছাড়া দুর্নীতির আরও কয়েকটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন মাহবুব। নৌকা নিয়ে এমপি হন মহিববুর। ৭ জানুয়ারির ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ঈগল নিয়ে মহিববুরের বিরুদ্ধে নেমে হেরে যান মাহবুব। দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

মহিববুরের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবরে বৃহস্পতিবার সকালে আনন্দ মিছিল হয় সাগরপাড়ের কলাপাড়ায়। সেই সঙ্গে পুরো নির্বাচনি এলাকাজুড়ে চলে মিষ্টি বিতরণ। কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাসিরউদ্দিন বিপ্লব বলেন, মহিববুর রহমান এমপি হওয়ার পর গত ৫ বছর শান্তিতে ছিল কলাপাড়া-রাঙ্গাবালীর মানুষ। দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস বলতে কিছুই ছিল না এখানে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির লোকজনও সন্তুষ্ট ছিল তার ওপর। যে কারণে নির্বাচনে মাহবুবুর রহমানের মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও জয় পেতে কষ্ট হয়নি তার। আগামী দিনগুলোয় শান্তিতে থাকার জন্যে দলমত নির্বিশেষে সবাই ভোট দিয়েছেন তাকে।

কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পাওয়াই শুধু নয়, তার উন্নয়ন করার মানসিকতাও থাকতে হবে। তেমনই একজন মানুষ এমপি মহিববুর। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু তাকে প্রতিমন্ত্রী করেছেন তাই এবার আগের চেয়েও অনেক বেশি উন্নয়ন হবে আমাদের এলাকায়।

পটুয়াখালী-বরিশালে আনন্দ-উল্লাস চললেও ভিন্ন পরিবেশ পিরোজপুর-১ (সদর-ইন্দুরকানী-নাজিরপুর) নির্বাচনি এলাকায়। এখানে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হয়েছেন দলের এক সময়কার আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শ ম রেজাউল করিম। ২০১৮র নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও এবারের নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালকে হারিয়ে এমপি হন রেজাউল। একাদশ জাতীয় সংসদে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন তিনি। কঠিন নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর সবাই ভেবেছিলেন, এবারও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে জোটেনি মন্ত্রিত্ব। বিষয়টি নিয়ে হতাশ পিরোজপুরের সাধারণ মানুষ। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু বলেন, সত্যিকার অর্থেই আমরা বঞ্চিত হয়েছি। বহু বছর পর মন্ত্রী পেয়েছিল পিরোজপুর। এমপি রেজাউল করিম মন্ত্রী হওয়ার পর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এই জেলায়। এবারও তিনি মন্ত্রী হবেন আশা ছিল। না হওয়ায় অনেকটাই পিছিয়ে গেলাম আমরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম