Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

সারা দেশে কনকনে ঠান্ডায় কাহিল মানুষ

তীব্র শীতে জবুথবু উত্তরের জনপদ

শীতবস্ত্র ও সরকারি বেসরকারি সাহায্যের দাবি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তীব্র শীতে জবুথবু উত্তরের জনপদ

উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি হিমেল হাওয়া বয়ে চলায় উত্তরের জেলাগুলোতে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শীতার্ত মানুষ খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে আছেন দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের লোকজন। তারা শীতবস্ত্র ও সরকারি-বেসরকারি সাহায্যসামগ্রীর দাবি জানিয়েছেন। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কনকনে শীতে কাঁপছে রাজশাহী : রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ কমছে। বইছে হিমেল বাতাস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকায় বেড়েছে দুর্ভোগ। ছিন্নমূল মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। কনকনে শীতে জবুথবু এই জনপদ।

নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার নির্মাণ শ্রমিক আসগর আলী বলেন, এই শীতের মধ্যে কাজে আসতে হচ্ছে। খুব কষ্ট হলেও জীবিকার তাগিদে না করে উপায় নেই। নগরীর বাসা-বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মাসুরা বেগম। তিনি বলেন, এই ঠান্ডার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। পানিতে হাত দেওয়া যায় না।

ঠাকুরগাঁওয়ে পোশাক পরেও কাঁপছে মানুষ : চার দিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। সূর্যের দেখা নেই। উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস বইছে। আয় রোজগার কমে যাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে দিনমজুর পরিবারগুলো। প্রাণীকূলও বৈরী আবহাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে। শীতের পোশাক পরেও ঠকঠক করে কাঁপছে মানুষ। একটু রাত গড়াতেই রাস্তাঘাট সুনসান। তাপমাত্রা এক ধাক্কায় নেমে যাওয়ায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে জেলাজুড়ে। কনকনে ঠান্ডায় যেখানে আগুন জ্বালানো হচ্ছে, সেখানেই জড়ো হচ্ছেন মানুষ। চায়ের দোকানে ভিড়। সবজি ব্যবসায়ী জমসেদ আলী বলেন, আমরা সকালে খেত থেকে সবজি নিয়ে বাজারে যাই। কিন্তু এত ঠান্ডা যে সকালে গাছে হাত দিতেই পারছি না। সদর উপজেলার পশ্চিম বেগুনবাড়ী ধামপাড়া এলাকার খিরপ্রসাদ, সনেকা বালা, স্মৃতি রায় আক্ষেপ করে বলেন, ‘শু?নি হামরা সরকারি কম্বল দেছে কত জায়গাত। কিন্তু হামরা একটাও পাইনি।’

কুড়িগ্রামে দেখা নেই সূর্যের : কুড়িগ্রামে বৃহস্পতিবার কুয়াশার দাপট কম থাকলেও কনকনে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দুদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের লোকজন কাজে বের হলেও প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে রয়েছে তারা। বিশেষ করে শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়েছে পড়েছে নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরের মানুষরা। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সদরের যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নটি নদীবেষ্টিত। তাই ঠান্ডা বেশি। বুধবার মাত্র ৮০টি কম্বল বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এগিয়ে এলে আমার এখানকার চরের মানুষ উপকৃত হতো।

রৌমারীর চরাঞ্চলে শীতের দাপট : ভারতের হিমালয় পর্বত থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় কুড়িগ্রামের রৌমারীর চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এতে করে রৌমারী ও রাজিবপুরের প্রায় ৫০ হাজার অতি দরিদ্র মানুষ খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে। প্রতিদিন রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে ঘন কুয়াশা। এর ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌপথে যান ও ট্রলার চলাচল। দুর্ভোগে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র ঠান্ডায় সবজি খেত ও বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা কৃষকদের। বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও সর্দিজ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। শীতার্ত মানুষ খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এ সময়ে জনপ্রতিনিধিরা তাদের পাশে নেই বলে অভিযোগ শীতার্ত মানুষের।

লালমনিরহাটে সোয়েটার বিতরণের দাবি : টানা তিন দিন ধরে প্রচণ্ড শীত ও হিমেল হাওয়ায় লালমনিরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনভর মিলছে না সূর্যের দেখা। হাড় কাঁপানো শীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এদিকে সরকারি বা বেসরকারিভাবে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও শিশুরা অনেকটা অবহেলিত। তাই কম্বলের পাশাপাশি শিশুদের জন্য সোয়েটার বিতরণের দাবি করছেন তারা। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, জেলার ৫ উপজেলাতে ২৪ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব বিতরণ চলছে। শিশুদের জন্য জ্যাকেট ও সুয়েটারসহ ৫০ হাজার পিস শীতবস্ত্রের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

শেরপুরে ঠান্ডায় বোরো আবাদ ব্যাহত : সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ভোররাতে বৃষ্টির মতো পড়ছে শিশির। সূর্যের দেখা মিলছে না। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঠান্ডার কারণে জেলার বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।

মেহেরপুরে শীতে কাবু ছিন্নমূল মানুষ : মেহেরপুরে ছিন্নমূল মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বাড়ছে। বৃহস্পতিবার দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। শহরের ফুটপাত ও বিভিন্ন খোলা স্থানে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ চরমে। ফুটপাতসহ বিভিন্ন মার্কেটে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে। শহরের কাথুলী সড়কের পাশে পানি নিষ্কাশন ড্রেনের ওপর এক ছিন্নমূল মানুষকে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। মল্লিক পাড়াতেও বেশ কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষকে শীতবস্ত্রহীন খোলা বারান্দায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।

আগৈলঝাড়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কয়েক দিন ধরে কনকনে শীত ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনমজুর, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা রাস্তার মোড়ে খরকুটা জ্বালিয়ে একটু উত্তাপ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সরকারীভাবে তেমন কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম