এবার ‘ট্রেনবালা’ সুবর্ণ এক্সপ্রেসে
শিপন হাবীব
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রেলপথে যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা জোরদারে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন ‘ট্রেনবালা’ হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী তরুণীরা। এবার মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা টু চট্টগ্রাম সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীসেবায় তারা যুক্ত হয়েছেন। এর আগে ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ট্রেনবালা যুক্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১০ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া ঢাকা টু কক্সবাজার রুটের পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনেও ট্রেনবালারা যাত্রীসেবার দায়িত্বে থাকবেন।
ইতোমধ্যে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের কাছে ‘ট্রেনবালা’ হিসাবে সেবা ও আতিথেয়তার মাধ্যমে আস্থা অর্জনের মাধ্যমে তারা নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরেছেন। যাত্রীবান্ধব অভিজ্ঞতার সঙ্গে বিনয়ী, ভদ্রতা ও নমনীয়তায়ও তারা এগিয়ে আছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন, এসব তরুণী ট্রেনের যাত্রীসেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, ট্রেনের ভেতর যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তায় ট্রেনবালা নামে পরিচিত তরুণীরা প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। আমরা ইতোমধ্যে দুটি আন্তঃনগর ট্রেনে এ সেবা যুক্ত করেছি। মঙ্গলবার সুর্বণ এক্সপ্রেস ট্রেনে তারা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। ১০ জানুয়ারি ঢাকা-কক্সবাজার রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন চালু হবে। ৭৮৫ আসনের ট্রেনটি কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছবে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে। ঢাকা থেকে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে পৌঁছবে বিকাল ৩টায়। নতুন ওই ট্রেনেও যাত্রীসেবায় এসব তরুণী নিয়োজিত থাকবেন।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ট্রেনবালা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব তরুণী যাত্রীসেবায় সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেরাও গর্বিত। এছাড়া বিনা টিকিটে ট্রেনে যাত্রী তোলা বা অন্য কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না থাকায় তাদের সেবায় যাত্রীদের পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষও বেশ খুশি।
মঙ্গলবার সুর্বণ এক্সপ্রেসে কমলাপুর স্টেশনে নামেন সাফনান। তিনি জানালেন, তিনিসহ আরও ১০ তরুণী ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন। যাত্রীদের সেবার পাশাপাশি ট্রেনবালারা বিশেস করে নারী-শিশুদের ওয়াশরুমে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে আন্তরিক সহযোগিতা করছেন। যাত্রীদের মালামাল রক্ষাসহ ট্রেনে মালামাল তোলা থেকে নামানোর ক্ষেত্রেও তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ট্রেনবালা পেশায় আসা তরুণীদের কয়েকজন যুগান্তরকে জানান, সাধারণ ট্রেনযাত্রীরাও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন। চলন্ত ট্রেনে সেবার কাজ নিশ্চিত করতে নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ শেষে তারা এ দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও সুর্বণ এক্সপ্রেস ট্রেনে দিন-রাত যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে অনবোর্ড ক্যাটারিং সার্ভিস প্রোভাইডার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মেসার্স এসএ করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, আন্তঃনগর সব ট্রেনেই এসব তরুণী যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এমনটাই জানিয়েছে। নারী উন্নয়নে এ সিদ্ধান্ত নিশ্চয় প্রশংসনীয়। আমরা তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন। তাদের সেবায় যাত্রীরা বেশ খুশি হচ্ছেন।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ১০ জানুয়ারি ঢাকা টু কক্সবাজার পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হবে। সেই ট্রেনেও এসব তরুণী যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবেন। তাদের পোশাক থেকে শুরু করে ব্যবহার, সেবার ধরন-সবই বিমানবালাদের মতো। আমরা বিমানবালার মতো করেই তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলছি।
রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বলেন, এসব তরুণীও সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সবকটি আন্তঃনগর ট্রেনে ‘ট্রেনবালা’ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে নারীদের কর্মসংস্থানের আরেকটি সুযোগ সৃষ্টি হবে।