জালিয়াতি নিয়ে যুগান্তরে রিপোর্ট
সিডিবিএলের দুই জিএমকে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ
মনির হোসেন
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিডিবিএল) জালিয়াতির ঘটনায় দুই মহাব্যবস্থাপককে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এরা হলেন-প্রতিষ্ঠানের ফাইন্যান্স অ্যাকাউন্টস, মানবসম্পদ এবং প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম এবং সিডিএস অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মইনুল হক। গত বছরের ১৪ নভেম্বর সিডিবিএলের জালিয়াতি নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটি এ সুপারিশ করে। সিডিবিএল সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সিডিবিএলের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ফজল বুলবুল যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। কিন্তু এখনো কপি হাতে পাইনি। রিপোর্টের কপি পেলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রোববার যুগান্তরকে বলেন সিডিবিএল স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। এখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আশা করি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের যে কোনো তথ্য সিডিবিএলে সংরক্ষিত থাকে। এ থেকে তথ্য পাচার শেয়ারবাজারের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১১ সালে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও প্রতিষ্ঠানটি থেকে তথ্য পাচারের অভিযোগ আনা হয়। তবে বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ‘সিন্ডিকেটে জিম্মি সিডিবিএল’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তর। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভার থেকে তথ্য পাচার ও জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি, পরিচালকদের দুর্নীতি এবং অনুমতি ছাড়া সার্ভারে প্রবেশসহ বেশ কিছু অনিয়ম তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ফজল বুলবুলের টানা ১২ বছর পর্ষদে থাকার বিষয়টিও উঠে আসে। এরপর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে চলতি বছরের ৩ জুলাই আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। ৪ মাস কাজ করার পর ৫ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এতে প্রতিষ্ঠানের ফাইন্যান্স অ্যাকাউন্স, মানবসম্পদ এবং প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, যৌন হয়রানি এবং নানা ধরনের অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের সুপারিশ করেছে কমিটি। একইভাবে সিডিএস অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মইনুল হককে অভিযুক্ত করেছে কমিটি। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতি এবং অসৎ আচরণের। তার বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে বলেছে কমিটি।
এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ফজল বুলবুল পর্ষদে টানা ১২ বছর ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) প্রতিনিধিত্ব করছে। যুগান্তরের প্রতিবেদনের পর ১৮ সেপ্টেম্বর এমডি বরাবর একটি চিঠি দেন বিএবির বর্তমান চেয়ারম্যান এবং একই সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
সিডিবিএলের এমডি বরাবর বাংলায় লেখা এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিএবির প্রতিনিধি হিসাবে রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেক্রেটারি ও জেনারেল বডির সম্মানিত সদস্য এক্সিম ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক একেএম নুরুল ফজল বুলবুলের বিএবি কর্তৃক ইতঃপূর্বে মনোনয়ন (জুন ২০১১) যথারীতি বহাল থাকবে ইনশাআল্লাহ। বিষয়টি নজরুল ইসলাম মজুমদারকে অবহিত করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ ব্যাপারে নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, আমি বিএবির প্রতিনিধি হিসাবে পর্ষদে আছি। সিডিবিএলের সংস্কারের জন্য আমি কাজ করেছি। সার্টিফিকেটে জালিয়াতির কারণে ৬ জনকে চাকরিচ্যুত করেছি। ‘আপনার রিপোর্টের পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের কপি এখনো হাতে পাইনি। এই কপি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
তবে এ বিষয়ে পুরোটাই অবগত বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি মো. আবদুল মোতালেব। এ ব্যাপারে যুগান্তরের পক্ষ থেকে তার অফিসে গিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি।
অন্যদিকে তথ্য সংরক্ষণে বিকল্প প্রতিষ্ঠান হিসাবে ২০১৭ সালে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে বিএসইসি। সিডিবিএলেরও এখানে শেয়ার রয়েছে। আর সিডিবিএলের প্রতিনিধি হিসাবে এই প্রতিষ্ঠানের বোর্ডেও রয়েছেন নুরুল ফজল বুলবুল। এছাড়াও ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ড নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে সিডিবিএলের প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন নুরুল ফজল বুলবুল।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে কমিশন। এক্ষেত্রে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। সিডিবিএল শেয়ারবাজারে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। সেখানে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের প্রমাণ পেলে আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেওয়া হবে। বিএসইসি কাউকে ছাড় দেবে না।