চৌদ্দগ্রামে ভোটের হিসাবে নানা সমীকরণ
গুরু মুজিবুল হক ও শিষ্য মিজানের লড়াকু ভোটযুদ্ধ
সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা

আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে চলছে গুরু-শিষ্যের ভোটযুদ্ধ। এ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক। তার বিপরীতে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন তারই শিষ্য সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান। স্থানীয়রা বলছেন, ভোটের লড়াইয়ে গুরু-শিষ্য কেউ কাউকে একচুলও ছাড় দেবেন-এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ভোটযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই চৌদ্দগ্রামে চলছে গুরু-শিষ্যের আধিপত্যের লড়াই। দফায় দফায় সংঘর্ষ, মামলা-হামলার ঘটনা নিত্যদিনের। ফলে এবারের নির্বাচনে আসনটিতে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
অপরদিকে জামায়াতের দুর্গখ্যাত চৌদ্দগ্রামে সরকারবিরোধী ভোটব্যাংক নিয়ে চলছে নানা মেরূকরণ। এ ভোটের প্রবাহে পালটে যেতে পারে সব হিসাবনিকাশ। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারের পক্ষ-বিপক্ষের ভোটের হিসাবে শিষ্যই রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামের সংসদ-সদস্য এবং আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হকের শিষ্য চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান ফুলকপি প্রতীক নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফারুক হোসেন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শাহজালাল মজুমদার চেয়ারম্যান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহীন, পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইদ্রিস মিয়াজী, ঢাকা মহানগর পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন বাচ্চুসহ আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র মিজানকে নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই দলীয় নানা মতবিরোধের কারণে মিজানুর রহমানসহ দলের বড় একটি অংশ মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এতে ভোটের মাঠে জামায়াতের ঘাঁটি খ্যাত চৌদ্দগ্রামে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি।
দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, ক্ষমতা এবং প্রশাসনিক দিক থেকে মুজিবুল হক এগিয়ে থাকার চেষ্টা করলেও বিএনপি-জামায়াতের ভোটার কেন্দ্রে এলে পালটে যেতে পারে সব হিসাবনিকাশ। আসনটিতে গুরু-শিষ্যের ভোটযুদ্ধে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আসনটিতে জাতীয় পার্টির গোলাম মোস্তফা, ইসলামি ঐক্যজোটের খোরশেদ আলম, গণফোরামের অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বতন্ত্রের মিয়া নিজাম উদ্দিন প্রার্থী হলেও মাঠে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ছে না।স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, মুজিবুল হকের অনুসারীরা সংঘাত-সহিংসতার চেষ্টা করছে। আমি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। জনসাধারণ নীরব ভোটবিপ্লবের মাধ্যমেই বিগত দিনের অনিয়ম, অন্যায় জোর-জুলুমের জবাব দেবে। চৌদ্দগ্রামের মানুষ পরিবর্তন চায়। আমার গণজোয়ার দেখে তারা বিস্মিত।
মুজিবুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত কাশিনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররেফ হোসেন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমানের মাঠে কোনো অবস্থান নেই। যার ফলে অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আমরা কোনো সংঘাত-সহিংসতায় বিশ্বাসী না। বারবার নির্বাচিত সংসদ-সদস্য মুজিবুল হকের উন্নয়নের বিচার করেই জনসাধারণ নৌকায় ভোট দেবে।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান বলেন, শুধু কুমিল্লা-১১ আসন নয়, সংঘাত-সহিংসতায় জড়ালে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।