প্রতিমন্ত্রী মন্নুজানের ভাতিজির সম্পদ সন্ধানে দুদক

নূর ইসলাম রকি, খুলনা
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনা-৩ আসনে টানা তিনবারের সংসদ-সদস্য এবং বর্তমান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আপন ভাতিজি শামীমা সুলতানা হৃদয়ের সম্পদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শামীমা সুলতানা বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পদে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি কেন্দ্রীয় তহবিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন। শামীমার পাশাপাশি তার আপন খালাতো ভাই এএম ইয়াছিন ওরফে পৃথিবীর সম্পদের খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। ইয়াছিন একই মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলের সহকারী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব-প্রশাসন) পদে কর্মরত।
দুদক সূত্র জানায়, শামীমা সুলতানা এবং ইয়াছিন আরাফাতের বিরুদ্ধে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় ব্যবহার করে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ ওঠায় সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু তরেছে দুদক। ইতোমধ্যে শামীমা ও ইয়াছিনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, খুলনা সিটি করপোরেশন, কেডিএ, রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আরও জানা যায়, শামীমা সুলতানা হৃদয়ের স্বামী মুহাম্মদ মেহরাব পাটওয়ারীও কেন্দ্রীয় তহবিলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) সংযুক্ত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। এছাড়া শামীমার বাবা (প্রতিমন্ত্রীর আপন ছোট ভাই) শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তগত সহকারী সচিব হিসাবে কর্মরত। শিগগিরই শাহাবুদ্দিন আহমেদের সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান শুরু করতে চাচ্ছে দুদক। শামীমা সুলতানা ২০১৯ সালের ৩০ জুন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পান। এরপর চাকরিতে যোগদান করলেও পদ থেকে অব্যাহতি নেয়নি। এদিকে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে খুলনা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (খুকৃবি) ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেয়েছেন শামীমা সুলতানার অনুসারীরা। বর্তমান সংসদ-সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান নৌকার সমর্থন না পাওয়ায় ২৬ নভেম্বর রেলিগেট এলাকায় শামীমার অনুসারীরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করে।
মন্ত্রণালয়ে চাকুরি করায় সব সময়ই ফুফুর (প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে থাকতেন শামীমা। খুলনা, ঢাকা এবং বিদেশ সফরেও প্রধান্য পেতেন তিনি। শামীমার আপন বোন আসমাউল হুসনা ওরফে শাপলা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং আরেক খালাতো বোন জান্নাতুল ফেরদৌস দোলা কুয়েটে সেকশন অফিসার হিসাবে কর্মরত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি শামীমা। তবে খুদে বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘আমি যা বলব তা কি আপনি লিখবেন ভাই? তাই কিছু বলতে চাই না। আপনার যা মনে হয় আপনি তো তাই লিখবেন।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক ইকবাল হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, শামীমা ও ইয়াছিনের তথ্যের সন্ধানের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানোর ঘটনা সত্য।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র পাননি প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। আসনটিতে থেকে নৌকার মনোনয়নপত্র পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।