নির্বাচন এলেই কুমিল্লার দুই প্রভাবশালী আফজল খাঁন এবং বাহাউদ্দীন পরিবার মুখোমুখি হন। এবারও কুমিল্লা-৬ সদর সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে পরিবার দুটি। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ-সদস্য এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. ক. ম বাহাউদ্দীন বাহার। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন প্রয়াত আফজল খাঁনের মেয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা। এই দুই প্রার্থী এবং তাদের অতীত স্নায়ুযুদ্ধ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাহাউদ্দীন এবং আফজল খাঁন পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। ৩৯ বছর আগে কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ. ক. ম. বাহাউদ্দীন বাহার এবং আফজল খাঁন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তখন কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আফজল খাঁন আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাহাউদ্দীন। ১০ বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাহাউদ্দীনের মুখোমুখি হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজল খাঁনের বড় ছেলে মাসুদ পারভেজ খাঁন (ইমরান)। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাহাউদ্দীনের মুখোমুখি আফজল খাঁনের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা। দুই প্রার্থীর প্রার্থিতাও বৈধ হয়েছে।

কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা) আসনে মোট প্রার্থী চারজন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের মনোনীত বাহাউদ্দীন, স্বতন্ত্র আঞ্জুম সুলতানা, জাতীয় পার্টির এয়ার আহমেদ সেলিম ও জাকের পার্টির আবুল হোসেন মজুমদার।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হন আফজল খাঁন। ওই নির্বাচনে প্রার্থী হন শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন বাহাউদ্দীন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মাসুদ পারভেজ খাঁন। তিনি ৩৮ হাজার ২৯৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। মাসুদ পারভেজ ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। চলতি বছরের ৬ মার্চ মাসুদ পারভেজ মারা যান। এর আগে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর মারা যান আফজল খাঁন। এবারের নির্বাচনে বাহাউদ্দীনের প্রতিদ্বন্দ্বী আফজল খাঁনের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনি সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ-সদস্য এবং মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। বাহাউদ্দীন মহানগর আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের সভাপতি। টানা তিনবারের সংসদ-সদস্য। এ ছাড়া তিনি দুইবার কুমিল্লা পৌরসভার (বিলুপ্ত) চেয়ারম্যান ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার দশক ধরে কুমিল্লায় খাঁন পরিবারের সঙ্গে বাহাউদ্দীনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। বাবা ও ভাইকে ছাড়া আঞ্জুম সুলতানা এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন। এর আগে আঞ্জুম সুলতানা বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।