ডেমরা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্যাস সংকটে দুর্ভোগ চরমে
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় আবারও গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে রান্নাবান্না নিয়ে গৃহিণীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অথচ মাসিক বিল নিয়মিত পরিশোধ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এদিকে বিকল্প হিসাবে অনেকেই গ্যাস সিলিন্ডার ও ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে বাড়তি খরচের বোঝা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকের ঘাড়েই চাপছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিবাসীরা।
শীতের শুরুতেই ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় প্রতিবছরই গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর শীতের আগে থেকেই এ সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। গত কয়েকদিন ধরে ২৪ ঘণ্টাই গ্যাসের পেশার থাকছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। কয়েক বছর ধরে চলা এই সমস্যার জন্য তারা তিতাস গ্যাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন। এই সমস্যা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি চান বাসিন্দারা।
তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলী, বাখরাবাদ, জালালাবাদ ও সুন্দরবনসহ পেট্রোবাংলার ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে তিতাস গ্যাসের আওতাভুক্ত রয়েছে বড় বড় পাওয়ার প্ল্যান্টসহ বৃহৎ, মাঝারি, ছোট শিল্পকারখানা ও আবাসিক গ্রাহক। তাই অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানিকে কোনো গ্যাস সংকট মোকাবিলা করতে হয় না। ব্যাপক গ্রাহক চাহিদা পূরণ করতে তিতাস গ্যাসের বিতরণ বিভাগকে বরাবরই বেগ পেতে হচ্ছে বিভিন্ন জটিলতার কারণে।
সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন তিতাস গ্যাসের গ্রাহক চাহিদার চেয়ে সরবরাহের পরিমাণ অন্তত ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম। সারা দেশে প্রতিদিন গ্রাহক চাহিদা অন্তত ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এলএনজি আমদানি কম হলেই ১৮০০ থেকে ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে গ্যাস সরবরাহ।
সরেজমিন ডেমরা থানা এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই বিচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সংকট আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ডিএসসিসির ৬৪ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডসহ ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। ডেমরা ও মাতুয়াইলের মাদ্রাসা বাজার, মোমেনবাগ, মদিনাবাগ, শাহজালাল রোড, কোনাপাড়া এলাকা, ডগাইর, বাঁশেরপুল, বড়ভাঙ্গা, সানারপাড়, কোদালদোয়া এলাকা, পূর্ব-পশ্চিম বক্সনগর, বামৈল, আমুলিয়া, ডেমরা ৪নং গেইট এলাকা, মেন্দিপুর, সালামবাগ, পূর্ব ডগাইর নয়াপাড়া, রাজধানীর খিলগাঁও, রামপুরা ও সবুজবাগ থানাধীন, নাসিরাবাদ, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও, নন্দিপাড়া, মাদারটেক, বাসাবো, গোড়ান, বনশ্রী, রামপুরা ও আফতাবনগরসহ প্রায় প্রতিটি অলিগলিতেই গ্যাসের সংকট প্রকট। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনোদিন সারাবেলা গ্যাস থাকে না বলে বাইরে থেকে প্রতিদিন খাবার কিনে এনে খেতে হচ্ছে। অথচ গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে সারা বছর। সংকট সমাধানে অনেকেই ইলেকট্রিক চুলা ও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন বলে তাদের বাড়তি অন্তত ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। দুএকটি এলাকা ছাড়া প্রায় সব এলাকার দৃশ্য একই রকম। পশ্চিম বক্সনগর এলাকার বাসিন্দা হারুন-অর-রশিদ যুগান্তরকে বলেন, আমার এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে ২৪ ঘণ্টাই গ্যাস আসে না। কখনো সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। শুধু গভীর রাতে অল্প প্রেশারের গ্যাস থাকে। মান্ডা এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সোনালি ব্যাংক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা এসএম মাহাবুবুল আলম যুগান্তরকে বলেন, জীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চয় ও আয় দিয়ে বহুতল ভবন করেছি। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসানসহ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্যাস সমস্যা নিয়ে বলেন, গ্যাস বিল দিয়েও এলাকার বাসিন্দাদের কষ্ট দূর হচ্ছে না। বারবার তিতাসের অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। এ বিষয়ে একটা পরিপূর্ণ সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, তিতাস গ্যাসের সার্বিক পরিস্থিতি, গ্যাস সরবরাহ ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানিসহ সব বিষয় বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে আগের তুলনায় গ্যাসের চাহিদা বেশি। তাছাড়া অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে সরকারিভাবে গ্যাসের নতুন নতুন উৎস তৈরির চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকটের সমাধান করা হবে।