খুলনায় যে কারণে মন্নুজান, পঞ্চানন ও বাবু মনোনয়ন পাননি

নূর ইসলাম রকি, খুলনা
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিভাগীয় শহর খুলনার ছয়টি আসনের তিনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন-বর্তমান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও খুলনা-৩ আসনের পরপর তিনবারের সংসদ-সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা-১ আসনের দুবারের সংসদ-সদস্য ও জাতীয় সংসদের বর্তমান হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস এবং খুলনা-৬ আসনের সংসদ-সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু।
এদিকে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা রোববার ও সোমবার বিকালে নগরীর নতুন রাস্তা, ফুলবাড়িগেট ও রেলিগেট এলাকায় অগ্নিসংযোগ, অবরোধ ও মানববন্ধন করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচক্ষণতার সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সবার কাজ করতে হবে। যারা এই মনোনয়নের বিরুদ্ধে রাস্তায় অবরোধ এবং অগ্নিসংযোগ করছেন তারা মূলত দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। এটা মোটেই ভালো সংকেত নয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আপন ছোট ভাই, এপিএস মো. শাহাবুদ্দিন এবং ভাতিজি শামীমা সুলতানা হৃদয়কে নিয়ে একাধিকবার মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যদের দাপটের কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মুখ খুলতে সাহস পায়নি তারা। সম্প্রতি কুয়েট ও খুকৃবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে প্রতিমন্ত্রীর এক আত্মীয়ের প্রভাব ছিল বলে জানা যায়।
খুলনা-১ আসনের পরপর দুবারের সংসদ-সদস্য এবং বর্তমান সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। এরমধ্যে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব, উপকূল এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলনামূলক কম হওয়া এবং বয়স বেড়ে যাওয়া।
এছাড়া খুলনা-৬ আসনে ২০১৮ সালে প্রথমবার সংসদ-সদস্য হয়েই সমালোচনার জন্ম দেন আক্তারুজ্জামান বাবু। তিনি ক্ষমতায় আসার পরপরই স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। নিজ কর্মীদের দিয়ে সুন্দরবনে তার আধিপত্য, কয়রা-পাইকগাছা এলাকায় নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি কাজ করা, অন্য ঠিকাদারদের বাধা দেওয়া, বিতর্কিত কর্মী নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, উপকূলের নানা ঠিকাদারী কাজে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ক্ষুব্দ এলাকাবাসী এক সময় তাকে কাদা ছুড়ে মারেন। বাধ্য হয়ে ট্রলার নিয়ে পালান তিনি।
জানতে চাইলে খুলনা-১ আসনের সংসদ-সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তে সহমত পোষণ করে আগামীতে একত্রে চলব।’ এ বিষয়ে খুলনা-৬ আসনের সংসদ-সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে খুলনা-৩ আসনের সংসদ-সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, ‘আমি নৌকা প্রতীকের বাইরে নির্বাচন করব না।’
এদিকে নতুন মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে খুলনা-৩ আসনে এসএম কামাল হোসেনের পক্ষে আওয়ামী লীগ অফিসে দোয়া, আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। আর খুলনা-৬ আসনে রশীদুজ্জামানের মনোনয়ন পাওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারণ এ আসনে দেড় ডজন প্রার্থী ছিলেন। যারা অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন। রশীদুজ্জামান পাইকগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক। ক্লিন ইমেজের কারণে প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। খুলনা-১ আসনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।