Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

চট্টগ্রামে ৬ আসনে চ্যালেঞ্জে পড়বেন নৌকার প্রার্থী

Icon

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার ও আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে ৬ আসনে চ্যালেঞ্জে পড়বেন নৌকার প্রার্থী

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেও অন্তত ছয়টি আসনে নৌকার প্রার্থীরা দলের স্বতন্ত্রদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। মনোনয়নবঞ্চিত এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। নির্বাচন করলে তারাই জিতবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। এছাড়া দলের পক্ষ থেকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বাধা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ভোটের মাঠে তাদের পক্ষে দলের যে কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন। ৬টি আসনে সোমবার থেকেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।

চট্টগ্রামে মোট আসন সংখ্যা ১৬। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত যে ৬ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা হলেন-চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক চৌধুরী সুমন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বর্তমান এমপি ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব সিআইপি এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি। এদের সবাই নিজ নিজ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এর মধ্যে পটিয়ায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন । চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ১৪ জন এমপির মধ্যে এলাকার উন্নয়ন, তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ততাসহ নানা কারণে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন তিনি। ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনই পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন। ৩ বারের নির্বাচিত এমপি ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও দুবারের নির্বাচিত সীতাকুণ্ডের এমপি দিদারুল আলম বাদ পড়েন।

পটিয়া আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ ১৫ আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন হাতে নিয়ে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছলে তার অনুসারীরা তাকে নগরীর রেলস্টেশনে বরণ করেন। আর এই সময়ে মনোনয়নবঞ্চিত সামশুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র নির্বাচন করার প্রস্তুতি শুরু করেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে বসে মতবিনিময় করার পাশাপাশি সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

এ প্রসঙ্গে সামশুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে এলাকার উন্নয়নে আমি নিবেদিত ছিলাম। পটিয়ায় এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমন কোনো মানুষ নেই সরকারের কোনো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন চলাকালে ঢাকায় থেকেছি। আর সরকারি সফরে কখনো বিদেশ থেকেছি। এর বাইরে প্রতিদিনই আমি পটিয়ার মানুষকে সময় দিয়েছি।

এ কারণে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ আমার ওপর সন্তুষ্ট। নির্বাচন করলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেই বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসনটি আবারও উপহার দেব।’

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১৫ জন। এখানে চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ড. আবুরেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী। মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মোতালেব সিআইপি এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান এমপি নদভীর ওপর দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনটি হাতছাড়া হতে পারে। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ আমার পক্ষেই কাজ করবে বলে আশা করছি।’

মীরসরাই আসনে ৬ বার সংসদ সদস্য ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বর্তমান এমপি এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দলের জাতীয় নির্বাচন বোর্ডের সদস্যও তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাননি। তার ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন। নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসাবে তিনি আগামী ২৯ ডিসেম্বর মতবিনিময়ের আয়োজন করেছেন নগরীতে।

এ প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার রাজনীতির বয়স ৫০-৫২ বছর। ’৭০ সালে ছাত্রলীগের খুদে কর্মী ছিলাম। ’৭৫-পরবর্তী আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জিয়ার আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। খালেদা জিয়ার ক্লিন হার্টে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ২০০৭ সালে ১/১১-এর সময় গ্রেফতারের ভয়ে ভাইয়ের লাশ বাড়ির উঠোনে ফেলে পালিয়ে এসেছি। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মীরসরাইয়ে ২৯ লাশ পড়ে। সেসব লাশ দাফন-কাফনে আমি ছিলাম। ওই সময়ে দলের অনেক নেতাকর্মী পালিয়ে ছিলেন গ্রেফতার-নির্যাতনের ভয়ে। তাদের আমি শহরে আশ্রয় দিয়েছি। ২০১৩-১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস আমি মোকাবিলা করি। কিন্তু ট্র্যাজেডি হচ্ছে, বিগত ১৫ বছর আমার দল ক্ষমতায়; এই সময়েও আমি হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। রোষানলে পড়েছি। এখন মীরসরাইবাসী চান আমি যাতে নির্বাচন করি। যেহেতু দল নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমি চাই জনপ্রিয়তা যাচাই করতে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস মানুষ আমাকে ভোট দেবে। আসনটি আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব।’ বাঁশখালী আসনে দুবারের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে তৃতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচন কর্মকর্তা পেটানো, সাংবাদিককে মারধরের হুমকি দেওয়া, স্বয়ং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গালাগাল করাসহ নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। দলের তৃণমূলের নেতারাও তার ওপর অসন্তুষ্ট। এর পরও কোনো জাদুমন্ত্র বলে হয়তো মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু দলের কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে ভোটের মাঠে সেই জাদুমন্ত্র কাজে লাগাতে পারবেন না। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চান মুজিবুর রহমান সিআইপি। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘দলের সাধারণ নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষ আমাকে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করছেন। তাদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

চন্দনাইশ আসনে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ আসনে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ, আবদুল জব্বার চৌধুরীসহ ১৭ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেছেন, ‘খালি মাঠে কাউকে গোল দিতে দেব না।’ অতীতে খালি মাঠে গোল দিয়ে অনেকে নিজেদের অনেক কিছু ভেবেছেন। এখন আমি নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর বর্তমান এমপি গত ১০ বছরে ফোন দেননি এমন নেতাদেরও ফোন দিচ্ছেন। তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।’

বন্দর-পতেঙ্গা আসনে বর্তমান এমপি এম আবদুল লতিফ। তাকে চতুর্থবারের মতো আ.লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে ২৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান এমপি এলাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। এ কারণে আমি নির্বাচন করব।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম