ভবনের আধিপত্য নিয়ে বিরোধ
কুমিল্লায় অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রাণ যায় ডা. জহিরুলের
আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লায় আবাসিক ভবনের আধিপত্য, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কমিটি নিয়ে বিরোধে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জহিরুল হক খুন হয়েছেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, ২০১০ সালে নগরীর রেসকোর্স এলাকায় ২০ শতাংশ জায়গা কেনেন স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন মোর্শেদ পাপ্পুর নেতৃত্বে ৩৩ জন। তাদের সঙ্গে ডা. জহিরুল হকও। ওই জায়গায় স্থাপিত গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ থেকে মাসে ১২ হাজার টাকা ভাড়া আসত। ছয় বছরের ভাড়া তুলে তা পাপ্পু আত্মসাৎ করেন। এর প্রতিবাদ করায় ডা. জহিরুল হকের সঙ্গে পাপ্পুর বিরোধের সৃষ্টি হয়। এরপর ডেভেলপারের মাধ্যমে সেখানে ১০ তলা ভবন নির্মাণের চুক্তি করা হয়। ভবন নির্মাণে জনপ্রতি সাড়ে ১২ লাখ টাকা করে চুক্তি করা হলেও পাপ্পু অন্য সদস্যদের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা করে আদায় করেন। এর প্রতিবাদ করায় দুজনের বিরোধ আরও বেড়ে যায়। জমির মালিকদের লিখিত অনুমতিতে ভবনের দ্বিতীয় তলায় চেম্বার করেন ডা. জহিরুল। আবাসিক ভবনে চেম্বার করা যাবে না বলে বাধা দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন পাপ্পু। এদিকে দুই বছর মেয়াদি কমিটি পাপ্পু সাড়ে তিন বছর চালান। পুলিশের উপস্থিতিতে ২১ অক্টোবর ফ্ল্যাট মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন হয়। এতে মীর মো. সলিমুল্লাহ সেলিম সভাপতি, ডা. জহিরুল হকের স্ত্রী ফারহানা আফরিন হিমি সহ-সভাপতি ও জাকির হোসেন কাজল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর হিমি বিরিয়ানি নিয়ে পাপ্পুর বাসায় যান। এ সময় পাপ্পু বিরিয়ানি ফেলে দেন এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান করেন। বিষয়টি জেনে ডা. জহিরুল অন্য সদস্যদের নিয়ে পাপ্পুর বাসায় যান। এ সময় পাপ্পু ও তার স্ত্রী-সন্তানরা ডা. জহিরুল ও তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়। জহিরুলকে কুমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৩ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ফারহানা আফরিন হিমি বলেন, ভবনে যাতে কোনো ঝামেলা না হয় সেজন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সন্ত্রাসী পাপ্পু গায়ে পড়ে সব সময় ঝগড়ার চেষ্টা করত। এ ভবনের বাসিন্দাদের অনেক টাকা পাপ্পু আত্মসাৎ করেছেন। তিনি একটা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তার সন্তানগুলোও একই প্রকৃতির। আমি আমার স্বামীর ঘাতকদের বিচার চাই। ওই ভবনের একাধিক বাসিন্দা জানান, পাপ্পু একজন সন্ত্রাসী। তার ও তার সন্তানদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তবে পাপ্পুর অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে একমাত্র ডা. জহিরুল হক প্রতিবাদ করতেন। তাই জীবন দিয়ে তাকে মাশুল দিতে হলো।
এদিকে, ডা. জহিরুল হক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নগরীতে একাধিকবার বিক্ষোভ সমাবেশ মানববন্ধন করা হয়েছে। সোচ্চার হয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলো। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-কুমিল্লার সভাপতি ডা. আবদুল বাকী আনিছ বলেন, এভাবে হত্যাকাণ্ড কেউ মেনে নিতে পারে না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বেশ কিছু কর্মসূচি দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে। কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সালাউদ্দিন মাহমুদ পাপ্পুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।