পালটে যাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনপদ
বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে আনোয়ারা হচ্ছে উপশহর
বদরুল হক, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম নির্মিত হয়েছে টানেল। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ পথের এক প্রান্ত হচ্ছে পতেঙ্গা অপর প্রান্ত শিল্প জোন হিসাবে খ্যাত দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা। টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলীর দুইপাড় সংযুক্ত হয়েছে। টানেলকে ঘিরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম শহর ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ রূপ নেবে। আগামী ২৮ অক্টোবর এ টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে নদীর দক্ষিণপাড়ের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে বইছে দৃশ্যমান পরিবর্তনের হাওয়া। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। এ টানেল ধরেই কক্সবাজার পর্যন্ত হয়েছে উন্নত সড়ক যোগাযোগ এবং পাশাপাশি রেল সংযোগ। সড়কের দুপাশে গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা এবং আবাসন। কর্ণফুলীর উত্তরপাড়ে চট্টগ্রাম মহানগর। আর দক্ষিণপাড় দ্রুতই রূপ পেতে যাচ্ছে উপশহরে, যা এতদিন পড়েছিল অনেকটা গ্রামীণ জনপদ হিসাবে। টানেল বাস্তবায়নে লাগছে উন্নয়নের ছোঁয়া। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতর দিয়ে পিএবি সড়ক হয়ে যানবাহন উঠবে কক্সবাজার মহাসড়কে। ভৌগোলিক কারণে আনোয়ারা উপজেলা একদিকে সমুদ্র বন্দরের পাশে অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের ফলে আনোয়ারা হবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যতম এক মাধ্যম।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসছে অভাবনীয় পরিবর্তন : টানেলকে ঘিরে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সমীক্ষা অনুযায়ী বছরে প্রায় ৭০ লক্ষাধিক ছোট বড় যানবাহন চলাচল করবে টানেলের ভেতর দিয়ে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব কমেছে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্পকারখানা : ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে জি টু জি পদ্ধতিতে আনোয়ারা গহিরায় এলাকায় ৭৭৪ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এতে ৩৭১টি শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে।
পর্যটন খাতে আসছে আমূল পরিবর্তন : টানেল ঘিরে শিল্পকারখানা ও আবাসনের পাশাপাশি খুলবে পর্যটন শিল্পের নতুন দুয়ার। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় আনোয়ারা উপজেলার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পাশে পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৩ দশমিক ৩৬ একর জমিতে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে।
সড়ক ও কৃষি জমিতে বিলবোর্ড স্থাপনের প্রতিযোগিতা : টানেলকে ঘিরে নদীর দক্ষিণ প্রান্ত আনোয়ারা হয়ে উঠছে অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। টানেলের সংযোগ সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের দুপাশের কৃষিজমিতে এখন অবৈধভাবে বাণিজ্যিক বিলবোর্ড গড়ে ওঠার প্রতিযোগিতা চলছে।
বাড়ছে জায়গা জমির দাম : বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে আনোয়ারা প্রান্তে দিন দিন বেড়েই চলেছে জায়গা-জমির দাম। বিশেষ করে টানেল সংযুক্ত সড়কের পার্শ^বর্তী এলাকার জায়গাগুলোর দাম বছরের মধ্যে বেড়ে গেছে প্রায় দশগুণ।
পালটে যাচ্ছে সামাজিক অবস্থান : আনোয়ারার জনসাধারণ টানেল নিয়ে দেখছে নতুন দিনের স্বপ্ন। টানেলের আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে পরিবর্তনের হাওয়া। স্থানীয়রা গোয়ালপাড়া এলাকার নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে মিল রেখে নাম দিয়েছে টানেল নগর।
টানেল সংযোগ সড়কে পর্যটকের ভিড় : টানেলের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা গাড়ি নিয়ে ছুটে আসছে। টানেল রোডটি এখন আশপাশের লোকদের জন্য একটি চমৎকার দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন বিকালে এখানকার স্থানীয় জনসাধারণ ও পার্শ^বর্তী উপজেলার লোকজন ঘুরে বেড়ান।