চট্টগ্রাম বন্দর
উদ্বোধনের অপেক্ষায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ টার্মিনাল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে পরিচালনার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে এখন চলছে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া। সব কিছু ঠিক থাকলে সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে পেতে যাচ্ছে পরিচালনার দায়িত্ব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে পিসিটি উদ্বোধন করাতে আগ্রহী বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নভেম্বর বা তার পরের মাসে শিডিউল পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
টার্মিনালটি চালু হলে বাড়বে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা। বর্তমান সক্ষমতার চেয়ে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। গত অর্থবছর এ বন্দর ৩০ লাখ ৭ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে পিসিটি-এর নির্মাণকাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে। সীমিত আকারে কিছু পণ্য পরীক্ষামূলকভাবে খালাসও করা হয়েছে।
অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শেষ হলেও হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট না থাকা এবং অপারেটর নিয়োগ না হওয়ায় এতদিন এটি পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি। পিপিপি-এর শর্ত অনুযায়ী পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডলিং ইকুইপমেণ্টের ব্যবস্থা করবে। এতে বন্দরের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, এ টার্মিনাল এক ধরনের ট্রায়াল বেসিসে চালাচ্ছি। ফুল স্পিডে যেতে হয়তো আরও দুই-তিন মাস লাগবে। একের পর এক আমরা টার্মিনাল করব এবং দেশি-বিদেশি অপারেটর খুঁজব। যারা দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার দিক থেকে এগিয়ে থাকবে, তারাই পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পিসিটি পুরোদমে চালু হলে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীরা পাবেন নতুন আরেকটি টার্মিনাল। ২০০৬ সালে বন্দরের সর্বশেষ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নির্মিত হয়েছিল। পিসিটি-এর চারটি জেটিতে একসঙ্গে চারটি জাহাজ বার্থিং নিয়ে পণ্য ওঠা-নামা করতে পারবে। ফলে বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজের চাপ কমে যাবে। পণ্য খালাসের অপেক্ষায় জাহাজকে দীর্ঘদিন বসে থাকতে হবে না। জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমে আসবে। এখানে গভীরতা বেশি থাকায় ভেড়ানো যাবে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের জাহাজ। ছয় হাজার কনটেইনার একসঙ্গে সংরক্ষণ করা যাবে ইয়ার্ডে।
পিসিটি প্রকল্পের পরিচালক বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার যুগান্তরকে বলেন, ‘গত বছরই টার্মিনালের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই অপারেটর নিয়োগ এবং উদ্বোধন হবে বলে আশা করছি। পিপিপি কর্তৃপক্ষ অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করছে। প্রকেল্পর ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। পরে ইকুইপমেন্ট বাদ দেওয়ায় তা কমে দাঁড়ায় এক হাজার ২৩০ কোটি টাকা। অবশ্য আমরা এক হাজার ১৫০ কোটি টাকাতেই কাজ শেষ করতে পেরেছি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে পিসিটি-এর কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩২ একর জমিতে এটি নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পে তিনটি কনটেইনার ও একটি তেল খালাসের (ডলফিন) জেটি রয়েছে। এগুলোতে একসঙ্গে চারটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। কনটেইনার জেটির দুটিতে অত্যাধুনিক কি গ্যাট্রি ক্রেন থাকবে। যেখানে ভিড়তে পারবে গিয়ারলেস (ক্রেনবিহীন) জাহাজ এবং অপরটিতে গিয়ার্ড (ক্রেনযুক্ত) জাহাজ।