Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনাদের জনসমাবেশ

অবিলম্বে পদত্যাগ করুন নইলে পরিণতি ভয়াবহ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অবিলম্বে পদত্যাগ করুন নইলে পরিণতি ভয়াবহ

সরকার পতনের একদফা দাবিতে জনসমাবেশ করেছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা দল ও জোট। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে এ সমাবেশ করেন তারা। এতে সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে নেতারা বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। জনগণের দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় পরিণতি হবে ভয়াবহ। তারা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নানা কৌশলে একতরফাভাবে আবারও নির্বাচন করতে চায়। এবার দেশের জনগণ সেই সুযোগ দেবে না। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো পাতানো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আগামী ২৮ অক্টোবর তারাও ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে।

গণতন্ত্র মঞ্চ : বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণসমাবেশ ও গণমিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকার এত হত্যা করেছে, এত অত্যাচার করেছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। সরকার একা হয়ে গেছে, তারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। তিনি অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জনান। 

সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আপনারা (সরকার) মনস্থির করেন, কীভাবে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আগামী ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশ আছে। এর আগেই মনস্থির করেন-তা না হলে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো জনগণ গলায় গামছা বেঁধে ক্ষমতা থেকে নামাবে। আরেকটি শাপলা চত্বর করতে গেলে জনগণ সেটি প্রতিহত করবে। জনগণ আর ভয় পায় না। তাই জনগণের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, হুমকি দিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলনকে প্রতিহত করা যাবে না। 

মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে, আপনাদের পালটা ধাওয়া দেওয়া শুরু করেছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, ‘শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) সুষ্ঠু ভোট চান না। কারণ উনি ভালো করেই জানেন, সুষ্ঠু ভোট দিলে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। তারা শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি সৃষ্টির সমাবেশ করছে।’ 

গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, জেএসডির সহসভাপতি মো. সিরাজ মিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আবু হাসান টিপু, গণসংহতি আন্দোলনের মনির উদ্দিন পাপ্পু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ। 

১২ দলীয় জোট : রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে (বিজয় চত্বর) সমাবেশ করে ১২ দলীয় জোট। এতে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও জোটপ্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে রেহাই পাবে না। তাদের পদত্যাগ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। যদিও সেটা আমাদের কাম্য নয়।’ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সরকারের পরিণতি হবে মারাত্মক। 

কারণ তারা খুনি, গুমকারী, লুটেরা। তাদের হাতে মানুষের জীবন ও দেশের অর্থনীতি নিরাপদ নয়। তাদের পদত্যাগ করতেই হবে। তা না হলে দেশের মানুষ যা প্রয়োজন তাই করবে। ১২ দলীয় জোটের সমাবেশে সংহতি জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আজকে দেশের রিজার্ভ তলানিতে। গার্মেন্ট খাত বিপদে পড়েছে। দ্রব্যমূল্য দাউ দাউ করে বাড়ছে। দেশ যেন দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে। 

বাকশালীদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম প্রমুখ। 

এলডিপি : বিকালে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এতে দলটির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘সরকার খুনের আসামিদেরও সাজা মওকুফ করে দিয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত অনেক আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। অথচ সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ 

তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৯০% লোক এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কিন্তু তারা জোরপূর্বক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরে আসতে চায়। জনগণ এ ব্যাপারে সজাগ। সুযোগ ও সময় বুঝে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসবে। এলডিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন-এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ প্রমুখ। 

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট : পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এতে জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটবে। 

গণদাবি মেনে সরকার পদত্যাগ না করলে জনগণই তাদের ক্ষমতা থেকে নামাবে। জাগপার একাংশের সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাত ও এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি মণ্ডল, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, এনডিপির কারি আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, বিকল্পধারার একাংশের শাহ আহমেদ বাদল, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এনপিপির নবী চৌধুরী প্রমুখ। 

এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জনসমাবেশ করে বাংলাদেশ লেবার পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে। এমপি-মন্ত্রীদের আবোল-তাবোল বক্তব্যই প্রমাণ করে ভোট চোর মাফিয়া সরকারের পতন খুবই নিকটে।’
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম