শ্যামনগরে সফল পরীক্ষামূলক প্রকল্প
অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত কাঁকড়া পোনার উৎপাদন
আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছে খুলনার মৎস্য বিভাগ। মাটির পুকুরে শুধু বায়োজেনিক খাবার ব্যবহার করে পোনা উৎপাদন পরীক্ষা চালান মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জাহিদুল হাসান। সম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে হাতে নেওয়া পাইলট প্রকল্পটি সফল হয়েছে। এখানে পোনা উৎপাদনের হার সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি। গবেষণা কার্যক্রমটি ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া সারাওয়াক এর অধ্যাপক ড. মো. বদরুল মুনিরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এ প্রক্রিয়া কাঁকড়া চাষিরা গ্রহণ করলে উৎপাদন ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, রফতানি আয় বাড়তে থাকার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়ার খামারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত কয়েক বছরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল এলাকায় গড়ে উঠেছে হাজার হাজার কাঁকড়ার খামার। তবে সফট সেল কাঁকড়ার জন্য সাতক্ষীরা জোন বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। অন্যস্থানে কাঁকড়া ফ্যাটেনিং (শক্ত) করা হলেও সফট সেল খামার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট হয়েছে সাতক্ষীরায়।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে তিনটি কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট স্থাপিত হয়েছে। কাঁকড়া হ্যাচারি রয়েছে দুটি। কাঁকড়া চাষি রয়েছেন দুই হাজার ৩২১ জন। এখানকার ৩০৭.৯০ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়। যেখান থেকে উৎপাদন হচ্ছে ২১৮৫.৭ টন। তবে কাঁকড়ার পোনা সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। একই সঙ্গে কাঁকড়া উৎপাদনে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সময়ে মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর কাঁকড়া রপ্তানি আটকে দেয়।
এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন অধ্যাপক ড. মো. বদরুল মুনির। ইউএনডিপির আর্থিক সহযোগিতায় এবং ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া সারাওয়াকের টেকনিক্যাল সাপোর্টে এন্টিবায়োটিকমুক্ত পোনা উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। এক বছরের প্রকল্পটি ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে শেষ হয়। তবে চাষি পর্যায়ে গবেষণার ফলাফল টেকসই হয় কিনা সেটা পর্যবেক্ষণের জন্য গবেষণা কার্যক্রম আরও ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২৩ এর জুনে শেষ হয়। গবেষণা কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে ওই ইউনিভার্সিটির দুজন পিএইচডি ফেলো মো. জাহিদুল হাসান ও মো. আব্দুল হান্নান পরিচালনা করেন।
খুলনা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েই চলেছে বাংলাদেশের কাঁকড়ার চাহিদা। প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়ার পোনা আহরণের ফলে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালে দেশে প্রথম বাণিজ্যিক হ্যাচারি স্থাপন হয় সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। তবে এর সফলতার হার এত কম যে তা বাণিজ্যিকভাবে চাষের উপযোগী নয়। খামারিদের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল মৎস্য বিভাগ। তবে এই প্রকল্পটি সফল হওয়ায় লাভবান হবেন কাঁকড়া চাষিরা। মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সফট সেল কাঁকড়া রফতানি বাড়ছে। ২০২১ সালের ৯ মাসে ৪৬২ টন সফট সেল রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৬৫ লাখ মার্কিন ডলার।