ডিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৬তম কমিশনার হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। শনিবার ডিএমপি সদর দফতরে বিদায়ি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। বিদায়ি ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুককে আনুষ্ঠানিকভাবে রীতি অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা ফুলের রশি দিয়ে গাড়ি টেনে বিদায় জানান। এ সময় পুলিশ সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এর আগে বিদায়ি কমিশনারকে বিদায়ি সালাম জানায় ডিএমপির সুসজ্জিত একটি চৌকশ দল। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে হাবিবুর রহমানকে ডিএমপি’র কমিশনার হিসাবে পদায়ন করা হয়।
হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল আলী মোল্লা এবং মা মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম। স্থানীয় এসএম মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন।
চাকরি জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তার সৃষ্টিশীল চিন্তাচেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার স্বাক্ষর। তার প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। ডিসি, হেডকোয়ার্টার্সে থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বাস্কেটবল এবং কাবাডি টিমের দায়িত্ব গ্রহণ করে পুলিশ টিমের খেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনেন।
হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অভিনব কর্মকৌশল প্রয়োগ করেন। অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ডিআইজি (প্রশাসন) হিসাবে পুলিশ সদর দপ্তরে সফলভাবে কাজ করার পর ডিআইজি হিসাবে ঢাকা রেঞ্জে যোগদান করেন। ঢাকা রেঞ্জের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি অতিরিক্ত আইজিপি হিসাবে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং দুবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন।
‘মানবিক পুলিশ অফিসার’ হিসাবে পরিচিত হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে বদলে গেছে বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবন। কাজ করেছেন যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতেও। দেশজুড়ে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান নির্মাণ করেছেন তিনি।
লেখালেখি এবং গবেষণাতেও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। তার সম্পাদিত গ্রন্থ ‘স্পিচেস অব শেখ হাসিনা’, ‘শেখ মুজিবের চিঠি’, ‘লেটারস অব শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’, ‘পিতা তুমি বাংলাদেশ’, ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’-এসব বইয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত উঠে আসে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা।
তার গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ঠার’ পাঠক সমাজে আলোচিত। এই বইয়ে তিনি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন। গ্রন্থটির জন্য হাবিবুর রহমান ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক-২০২৩’ লাভ করেন।