Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

অস্তিত্ব সংকটে মান্ডার খাল

Icon

মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অস্তিত্ব সংকটে মান্ডার খাল

ভয়াবহ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে রাজধানীর উত্তর মান্ডার অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশন খাল। বর্তমানে খালের চারদিকের পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন। এ ছাড়া দুর্গন্ধযুক্ত কুচকুচে কালো পানির কারণে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রোগবালাই। এই খালটি যেন মশার প্রকৃত প্রজনন ক্ষেত্র ও চারদিকের পরিবেশ বিপন্নের একমাত্র কারণ। রাজধানীতে বর্তমানে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ বিস্তার সত্ত্বেও খাল পরিষ্কারের কোনো উদ্যোগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নিচ্ছে না বলে অধিবাসীদের অভিযোগ। সাড়ে তিন কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ উত্তর মান্ডার এই খাল রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

রাজধানীর মুগদা থানাধীন ডিএসসিসির ৭২ নম্বর ওয়ার্ডটি হলো-মান্ডা মৌজার মান্ডা খালপাড় থেকে সোনামিয়া রোডের পশ্চিম পাশ। মান্ডা নামে একটি এলাকার (সাবেক গ্রাম) উত্তর অংশ নিয়ে গঠিত এই ওয়ার্ড। তবে এটি খুব বেশি বড় নয়। এখানে দেড় লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে বলে সর্বত্রই ঘিঞ্জি পরিবেশ। প্রধান সড়ক দ্বারা বিভক্ত মান্ডার উত্তর পার্শ্বের ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে দক্ষিণ পার্শ্বের ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

সরেজমিন দেখা গেছে, এলাকা অনুযায়ী এখানে লোকসংখ্যা অনেক বেশি। বেশিরভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস মান্ডায়। এখানকার খালের নাম ‘জিরানি খাল’ হলেও লোকমুখে পরিচিত উত্তর মান্ডা খাল, জিরানি খাল, দেবধোলাই ও সূতির খালসহ এলাকার চারদিকে বয়ে গেছে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত। দীর্ঘ এই খাল দখল-দূষণের কবলে বিলীন হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে নির্বিচারে ফেলা পয়োবর্জ্য ও শিল্পকারখানার বর্জ্যে খালের পানি পচে কালচে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। অধিবাসীরা পলিথিনে করে গৃহস্থালির আবর্জনা সরাসরি খালে ছুড়ে ফেলছেন। এখানে নোংরা পরিবেশেই বসবাস করতে হয় অধিবাসীদের।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, মান্ডা ব্রিজ থেকে সুখনগর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার খালেই গৃহস্থালির সব আবর্জনা নির্বিচারে খালে ফেলছেন অধিবাসীরা। সুখনগর ব্রিজ থেকে আবার গ্রীন মডেল টাউনের দিকে প্রবাহিত আমিন মোহাম্মদ ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খালের একই অবস্থা। গ্রীন মডেল টাউন থেকে দক্ষিণ পাশ হয়ে টাউনের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত সোয়া কিলোমিটার খালটিতেও আবর্জনা, আগাছা ও ঘাসের জঙ্গলে ভরপুর। ৬০ ফুট প্রশস্তের খাল অবৈধ দখলের কারণে কোথাও কোথাও সরু নালায় পরিণত হয়েছে। তবে অধিবাসীদের অভিমত, কর্তৃপক্ষ যদি খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখে তাহলে পানির প্রবাহে কোনো বাধা থাকবে না এবং বর্ষাকালে নিু এলাকা তলিয়ে যাবে না। ঢাকা জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, মান্ডা খালের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার আর প্রস্থ ৩০ থেকে ৮০ ফুট। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা, দখল, দূষণ, এলাকাবাসীর অসচেতনতা, সরকারি-বেসরকারি নানা অবকাঠামো নির্মাণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে খালটি।

উত্তর মান্ডার সুখনগর এলাকার অধিবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু মো. রাহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, এই এলাকার সর্বত্রই নোংরা পরিবেশ থাকায় রোগবালাই লেগেই থাকে। প্রতিবছর ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ লেগেই থাকে উত্তর মান্ডা এলাকায়। তিনদিক থেকে খালের মিলনস্থল বলে অধিবাসীদের ফেলা সব আবর্জনা এখানে এসে জমে। আর মশা দিন দিন বেড়েই চলেছে। খালগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয় না কেউ।

এ বিষয়ে ৭২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল আলম শামীম যুগান্তরকে বলেন, ওয়ার্ডের অধিবাসীদের বারবার সচেতন করলেও তারা নির্বিচারে খালেই গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলেন। এখানে গ্রীনসিটি এলাকায় নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে যেখানে ওয়ার্ডের সব আবর্জনা জমা করা হয়। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা খুবই জরুরি। এ বিষয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী-প্রধান মো. সাহাবুদ্দিন মোবাইল ফোনে বলেন, মান্ডা এলাকার খালগুলোতে জমে থাকা আবর্জনা দ্রুত পরিষ্কার করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম