Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কন্যাশিশুরাই বেশি অনিরাপদ

Icon

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কন্যাশিশুরাই বেশি অনিরাপদ

কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকদের মধ্যে কন্যার সংখ্যা বেশি। শারীরিক কিংবা যৌন সহিংসতার শিকারেও তাদের তালিকাও দীর্ঘ। আবার সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে কন্যাসন্তানের চাহিদাও বেশি। সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, ফুটপাত-ডাস্টবিন এবং খোলা আকাশের নিচে পাওয়া নবজাতকদের তিন চতুর্থাংশ কন্যাশিশু। নারী উন্নয়ন এনজিও সংস্থা বলছে, এখনো অধিকাংশ পরিবারেই ছেলে শিশুর চাহিদা বেশি থাকায় কন্যাভ্রূণ হত্যা হয় অথবা জন্মের পরে পরিত্যাগ করা হয় মেয়েদের। ফলে আশ্রয় নিবাসগুলোতে কন্যার সংখ্যাই থাকে বেশি। এমন অবস্থায় প্রতি বছরের মতো এবারও আজ জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে ফের সভা, সেমিনারে প্রতিশ্রুতি আসবে, কন্যাশিশু সুরক্ষায় নানা আঙ্গিকে আলোচনা হবে। তারপর যেমন চলার, চলে তেমনই। কন্যাশিশুরা ঘরে-বাইরে অনিরাপত্তায় ভোগে। শিশু নির্যাতনবিরোধী আইন কার্যকরের ঘাটতিও আছে ষোলো আনা।

রাজধানীর আজিমপুর ছোট্টমণি নিবাস সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর একটি বড় অংশ স্থান হয় নিবাসটিতে। ১-২ দিনের নবজাতকের সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই ২ বছরের কম বয়সি শিশুদের দত্তক নিতে দরখাস্ত করেন। আবার প্রতিবন্ধী শিশু বা বিশেষ শিশুদের চাহিদা কম থাকে। আবার তথ্য বলছে, দত্তক নেওয়া কিছু কন্যাশিশুদের ওপরও চলে শারীরিক নির্যাতন। নিবাস থেকে নতুন পরিবেশে বাবা-মা তুল্য অভিভাবকদেরও কেউ কেউ হয়ে উঠছেন অপরাধী।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম সূত্র বলছে, চলতি বছরে ৮ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯৩ কন্যাশিশু। এছাড়া ১০১ কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৩২২ জন, গণধর্ষণের শিকার হয় ৭২ কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু রয়েছে ৩৯ জন। এছাড়া প্রেমের অভিনব ফাঁদে ফেলে ৭০ কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে মোট ৩২৯ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ সময়কালে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ৩০ কন্যাশিশু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজের লুকিয়ে থাকা হিংস্র পুরুষরা ভেবেই নেয়-শারীরিক নির্যাতন করা হলে শিশুরা পরিবার-সমাজ এবং আদালতে আপরাধীদের বিষয়ে বিবরণ দিতে পারবে না। আর প্রতিবন্ধী কন্যাশিশুরা তো খেয়ালই করতে পারবে না, কে তার সর্বনাশ করেছে। এমন চিন্তা থেকে কন্যাশিশুরা দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।

কন্যাশিশুরা অ্যাসিড সন্ত্রাসেরও শিকার হচ্ছে। গত ৮ মাসে অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১০৪ কন্যাশিশু। এর মধ্যে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ২৬০ জন। ৮ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ৩৬ কন্যাশিশু। এ সময়ে ১৩৬ কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়। এর অন্যতম কারণ পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আগে থেকে পারিবারিক শত্রুতা, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন ইত্যাদি। ৮ মাসে ১১ কন্যাশিশুকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, এ বছর এখন পর্যন্ত ৩০৭ কন্যাশিশুর পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭ কন্যাশিশুর এবং ৪৭ জন কন্যাশিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি জানান, কন্যাশিশুরা সহজেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অপরাধীরা মনে করে এদের নির্যাতন করে সহজে পার পেয়ে যাবে। তাছাড়া কন্যাশিশুরা সবচেয়ে বেশি ঘর এবং আপনজন ধারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কন্যাশিশুর প্রতি এমন বর্বরতা প্রতিরোধে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। কন্যাদের প্রতি সর্বদা নজর রাখতে হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, ঘরবন্দির দিক থেকেও কন্যাশিশুরা বেশি। শিক্ষা ক্ষেত্রেও কন্যাশিশুর প্রতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে পড়াশোনার বিষয়। ছোট্ট বয়সে কন্যার আগ্রহকে প্রাধান্য না দিয়ে ইংরেজি বা বাংলা ভার্সন-মিডিয়ায় দেওয়া হচ্ছে। এ বয়সে প্রাইভেট পড়ছে তিনজন শিক্ষকের কাছে। সেগুনবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার পান্না জানান, সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শিশুরা খেলার কিছুটা হলেও সময় পাচ্ছে। পড়াশোনার চাপ বেশি নেই। কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মারাত্মক চাপ দেওয়া হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র অপারেশন ডিরেক্টর চন্দন জেড গমেজ যুগান্তরকে বলেন, শিশুদের অধিকার নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে না। কন্যাশিশুর বেলায় এটা আরও জরুরি। কারণ দেশে কন্যাশিশুরা সহজেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কন্যাশিশু উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব কন্যাশিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়েছে, তারা কী করছে-কোথায় যাচ্ছে তা নজর রাখতে হবে। কন্যাশিশুদের অনেকেরই বাল্যবিবাহ হচ্ছে। বাল্যবিবাহ কন্যাশিশুর অধিকার ক্ষুণ্নের অন্যতম।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম