Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কোথাও হচ্ছে না ত্যাগীদের ঠাঁই

Icon

জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোথাও হচ্ছে না ত্যাগীদের ঠাঁই

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোয় আগের মতো কাউন্সিলে তৃণমূলের সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন না হওয়ায় কর্মীদের কদর কমে গেছে। এসব কারণে তৃণমূলে দল গোছানোর পরিবর্তে নিজের আখের গুছিয়ে পদ কেনার ধান্দায় রয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। অভিযোগ-দলের জন্য যতই ত্যাগ অথবা জনপ্রিয়তা থাকুক না কেন, দলীয় পদ পেতে এসব আর কাজে আসছে না। অনৈতিক লেনদেন এবং ‘মাই ম্যান’ হলে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিও দলের শাখা সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকের পদ পাচ্ছেন। সম্প্রতি কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের জেলা ও একাধিক উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু কমিটি গঠন করা হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

আওয়ামী লীগ : দল ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্র থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষিত হয়ে আসছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত হওয়ায় তৃণমূলে অসন্তোষ রয়েছে। কাউন্সিল ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় তারাও উপজেলার নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। সম্প্রতি কেন্দ্রে পাঠানো জেলা কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বাঘা বাঘা অনেক নেতার ঠাঁই হয়নি। তবে কমিটিতে কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত না থাকা অনেক হাইব্রিড নতুন মুখ রাখা হয়েছে। উপজেলার অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিশেষ করে চকরিয়া-পেকুয়া কমিটি থেকে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তাই অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী এখন আর দলের কর্মসূচিতে সময় দেন না। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের দাবি-যোগ্য ও প্রকৃত নেতাদের নামই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজার যুবলীগ : চলতি বছরের ৯ মার্চ কক্সবাজার পৌর, ১০ মার্চ রামু, ১১ মার্চ কুতুবদিয়া, ১২ মার্চ উখিয়া এবং ১৩ মার্চ মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। কিন্তু কোথাও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। সম্মেলন সম্পন্ন করে নতুন কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা কেন্দ্রে নিয়ে যান। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ কক্সবাজার সদর উপজেলা কমিটির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। একইভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবে ঢিমেতালে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে পেকুয়া, চকরিয়া, চকরিয়া পৌরসভা ও টেকনাফ উপজেলা যুবলীগ।

যুবলীগের একাধিক সাবেক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এ সময় সোহেল আহমদ বাহাদুরকে সভাপতি ও শহীদুল হক সোহেলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পাঁচ বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে তারা ব্যর্থ হন। কোনো ওয়ার্ড কমিটিও গোছাতে পারেননি। নানা অনিয়ম, অভিযোগ এবং ব্যর্থতায় গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। নতুন কমিটি হয়নি। নতুন নেতৃত্ব উঠে না আসায় তৃণমূলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে জেলা যুবলীগ অতীত জৌলুস হারিয়েছে। ঝিমিয়ে গেছে দলের কার্যক্রম। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে পুনরায় কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ : ২৮ জুলাই জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হলেও কমিটি হয়নি। ঢাকায় পদপ্রত্যাশীরা একেকজন একেক নেতাকে ম্যানেজ করার প্রণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন। পদ পেতে অনেকে দরকষাকষি করছেন। তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি ও বিতর্কিত ব্যক্তিরাও লবিং করছে বলে জানা গেছে। যদিও দেড় মাসেও জেলা কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, যোগ্যদের সমন্বয়ে মাসখানেকের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে।

ছাত্রলীগ : কক্সবাজারে ছাত্রলীগের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। কনক-মনজুরের কমিটির পর কেন্দ্র থেকে সভাপতি-সম্পাদক হয়ে আসা আলী-তাহের কমিটি ছাত্রলীগের ঐতিহ্য হারিয়েছে। এরপর ইশতিয়াক-রাশেদ এবং বর্তমান সাদ্দাম-মারুফ কমিটিও তৃণমূলের নির্বাচিত নন। সংগঠন গোছানোর পরিবর্তে সভাপতি ও সম্পাদক এলাকাভিত্তিক ‘মাই ম্যান’ সৃষ্টি করেছেন। ফলে সত্যিকারের মুজিব আদর্শের সৈনিক উঠে আসছে না। এক বছরের কমিটি প্রায় তিন বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। বরং দখলবাজসহ নানা অভিযোগে গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছেন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক। যদিও তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা জানান, কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম জানান, ছাত্রলীগ-যুবলীগ থেকে উঠে আসা নেতৃত্বই আগামী দিনে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্ব পালন করবে। আগে তৃণমূলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সুসংগঠিত করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা হতো। তিনি জানান, কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করা জরুরি। পদপ্রত্যাশীরা কর্মী সৃষ্টি ও যোগাযোগ বৃদ্ধি করতেন। কিন্তু দল টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় এ ধারার ব্যত্যয় ঘটছে।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে কক্সবাজারে ছাত্রলীগ-যুবলীগের জৌলুস ছিল। কিন্তু এক দশকের বেশি সময় জেলা থেকে তৃণমূল কোথাও সংগঠনগুলো আগের মতো সুসংগঠিত নেই। এমনকি সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া কমিটির অন্যরা পরস্পরকে চেনেন না। নেই কোনো ‘চেইন অব কমান্ড’। নেতাকে তোয়াজ করেন অনেকে। এ কারণে অনেক ত্যাগী নেতা এখন দলের কর্মসূচিতে যান না। আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ জানান, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাজার হাজার ত্যাগী নেতাকর্মী থাকলেও তারা একপ্রকার অস্তিত্ব সংকটে রয়েছেন। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের জেলার দায়িত্বশীলদের স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতিহিংসা, উচ্চবিলাসিতা ও অদক্ষতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল জানান, নানা অভিযোগ ওঠার পর কক্সবাজারের যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিবেদিতপ্রাণ, ত্যাগী ও সৎ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শিগগিরই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম