সাঙ্গু নদীর অববাহিকায় ১৪ ভাগ বন উজাড়
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের একটি বড় অংশ পার্বত্য এলাকায়। বান্দরবানের থানচি উপজেলায় সাঙ্গু নদীর অববাহিকায় বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল রয়েছে। এই বনাঞ্চল ধ্বংস করছে একশ্রেণির মানুষ। সাঙ্গুর দুই পাড়ের ১২৩৬ বর্গকিমি. এলকাতেই ১৪ শতাংশ বন উজাড় হয়েছে। চার বছর ধরে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) সম্প্রতি তাদের এই গবেষণার কাজ শেষ করে।
গবেষণায় দেখা যায়, সাঙ্গু নদীর অববাহিকায় ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৩৭ ভাগ বনাঞ্চল অপরিবর্তিত ছিল। কিন্তু এই সময়ে বন থেকে খালি জমিতে পরিণত হয়েছে ১৪ শতাংশ। একই সময়ে একই অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে আবার বনে পরিণত হয়েছে ৩ শতাংশ ভূমি। স্যাটেলাইট ছবিতে প্রাকৃতিক বন থেকে জমিতে পরিণত হওয়ার যে ধরনের ছবি পাওয়া গেছে তাতে বন উজাড় হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হয়েছে জুম চাষ।
স্পারসোর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাহমুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন থেকে একটি অনুরোধ এসেছিল আমাদের কাছে। সেই সময় পত্র-পত্রিকায় কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হয় যে, সাঙ্গু নদীর অববাহিকায় প্রাকৃতিক বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। কী পরিমাণ বন ধ্বংস করা হচ্ছে তা পর্যালোচনার জন্য এই পরীক্ষা চালানো হয়। এখানে নদীর দুই ধারেই বন রয়েছে।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে ওই এলাকার স্যাটেলাইট ছবি নেওয়া হয় সেন্টিনাল ২ (১০ মিটার স্পেশাল রেজুলুশনের স্যাটেলাইট ক্যামেরা) এর মাধ্যমে। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সেখানকার বনভূমির কী পরিবর্তন আসে তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। চার বছর ধরে গবেষণাটি চলে। কাজটি শেষ হয় চলতি বছর। সেখানে আমরা দেখতে পাই কিভাবে প্রায় ১৪ শতাংশ বন উজাড় হয়েছে। যেখানে বন উজাড় করা হয়েছে সেখানে প্রাকৃতিকভাবে বন পুনরুদ্ধার না হলেও অন্য জায়গায় ৩ শতাংশ প্রাকৃতিকভাবে আবার বনের সৃষ্টি হয়েছে। বন উজাড়ের প্রধান কারণ জুম চাষ বলে ছবিতে মনে হচ্ছে। আরও কিছু কারণ থাকতে পারে যা মাঠপর্যায়ে না দেখে বলা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্টি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. আল আমিন যুগান্তরকে বলেন, বন উজাড় মানেই গাছ কাটা হয়েছে। সাঙ্গু নদীর অববাহিকায় শুধু জুম চাষ নয় তামাক চাষও হয় প্রচুর। এই জায়গাগুলো তামাক চাষের জন্য খুব ভালো। তাই বন উজাড় করা হয়। মাল্টিন্যাশনাল অনেক কোম্পানি তামাক চাষের জন্য ঋণ থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে। সাঙ্গু নদীর এই স্থানগুলো জলছায়া অঞ্চল। সেখান থেকে বন উজাড় হলে পলি ক্ষয়ে এসে নদীগর্ভকে উঁচু করে দেয়। এটা বড় ধরনের সমস্যা। এটি ভূমিধস শুরু হওয়ারও কারণ।
তিনি আরও বলেন, বনভূমি শুধু উজাড় হচ্ছে না সে জায়গা দখলও হচ্ছে। আর দখল করার প্রথম ধাপ হলো গাছ কেটে বন উজাড় করা। আর দ্বিতীয় ধাপ হলো সম্ভব হলে পুরোপুরি দখল করে নেওয়া। এই দখল প্রক্রিয়া সাধারণত বনভূমির মাঝ বা বনভূমির একপাশ থেকে শুরু হয়। তাই বনভূমির একপাশ থেকে যখন গাছ কাটা বা বন উজাড় হওয়া শুরু হবে তখন মনে রাখতে হবে, জায়গাটি কিছু দিনের মধ্যে দখল হয়ে যেতে পারে।