Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

কোন্দলের আগুনে পুড়ছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি

Icon

মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোন্দলের আগুনে পুড়ছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি

তিন মাসের মধ্যে নতুন কমিটি করার শর্তে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটি দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। উলটো আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতারা চরম অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। দলীয় নানা বিষয় নিয়ে বর্তমানে সদস্যসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। একইসঙ্গে বিরোধ সংঘাত-সহিংসতায় গড়িয়েছে।

বুধবার চট্টগ্রাম নগর বিএনপি কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ব্যাপক মারামারিতে জড়ায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদের অনুসারীরা। এ সময় মোস্তাকসহ উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনা নিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুপক্ষের এ সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপিতে ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে। নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, এ ঘটনায় চরম অনৈক্যের সুর ফুটে উঠেছে। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যখন সরকার পতনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশ নিতে নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে তখন এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘আমি রোডমার্চের প্রস্তুতি সভায় অংশ নিতে পার্টি অফিসে প্রবেশ করছিলাম। ঠিক ওই সময় কিছু লোকজন আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে আমি জানতে পারি-তারা যুগ্ম আহ্বায়ক এনামের লোক। তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি নিজের লোকজন দিয়ে এনাম ছাত্রদলের একটি পকেট কমিটি করিয়েছেন। এ নিয়ে আমি বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেছি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে বহিরাগত লোকজন দিয়ে তিনি আমার ওপর হামলা চালিয়েছেন। এ হামলার নির্দেশ দিয়ে এনাম ভারতে চলে গেছেন। আমি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছি। আমার মাথা ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়েছে। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। তিনি বলেন, বিষয়টি দলের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। তাই আইনগত ব্যবস্থা নেইনি। দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। আশা করছি তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। মোস্তাক আহমদ আরও বলেন, ৪০ বছর ধরে আমি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। আর এনাম হাইব্রিড নেতা। বড়জোর ১০ বছর হলো এনাম বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।

চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করায় এনামুল হক এনামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে হামলার সঙ্গে এনামের সমর্থকদের জড়িত থাকার অভিযোগ এনামের ঘনিষ্ঠ সূত্র অস্বীকার করেছে। বরং মোস্তাক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত কয়েকজন নেতাকে নিয়ে সম্প্রতি তিনি মাঠে নেমেছেন। এ কারণে দলের অনেক নেতাকর্মী তার ওপর ক্ষুব্ধ।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান যুগান্তরকে বলেন, মারামারির ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন পক্ষ জড়িত ছিল। আমরা তদন্ত করছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে পটিয়া আসনে এনাম প্রার্থী হয়েছিলেন। একই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কয়েকদিন আগে মোস্তাক কয়েকজন নেতাকে নিয়ে জুয়েলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে এনাম অনুসারীরা আরও ক্ষুব্ধ হন। ১৪ বছরে একদিনের জন্যও আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না জুয়েল। দলের দুঃসময়ে এনাম হাল ধরলেও জুয়েল ছিলেন বিদেশে। তার গায়ে পুলিশের আঁচড়ও পড়েনি। সেই জুয়েলকে নিয়ে মোস্তাক গ্রুপিং করায় এনাম অনুসারীরা মানতে পারেননি। এ ঘটনার জেরে মোস্তাকের ওপর হামলা হয়েছে।

২০১৯ সালের ২ অক্টোবর দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কোন্দল এড়াতে ৬৫ সদস্যের কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নগর বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানকে দেওয়া হয়। মোস্তাক আহমদকে সদস্যসচিব করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি কাজ শুরুর পর কয়েকটি ইউনিটে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সদস্য অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও লিয়াকত আলী অভিযোগ তোলেন। ওই সময় কয়েকটি ইউনিটে পালটা কমিটিও গঠন করা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তিন নেতাকে ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। অর্থ-লেনদেনে কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগ তদন্তে আজিজুল বারী হেলালকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। এদিকে, চলতি বছরের ৭ মে আহ্বায়ক কমিটির চার নম্বর সদস্য এনামুল হক এনামকে এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এ প্রসঙ্গে আলী আব্বাস যুগান্তরকে বলেন, আমি শহিদ জিয়ার আদর্শ লালন করি। দলের দুঃসময়ে কাজ করেছি। দলের মধ্যে অনৈতিক কিছু হলে সেটার প্রতিবাদ করাও আমার দায়িত্ব মনে করি। সেটি করতে গিয়ে আমার ওপর বহিষ্কারের খক্ষ নেমে আসে। নাসিমন ভবনে বুধবার দুপক্ষের মারামারি ও হামলার ঘটনা অপ্রত্যাশিত। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম