ঝিকরগাছায় স্মার্ট কার্ড সংগ্রহে ভোগান্তি, ক্ষোভ
সীমিত কেন্দ্র বাড়িয়েছে ভোগান্তি
ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যশোরের ঝিকরগাছায় স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণে সীমিত কেন্দ্রের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলার দুই লক্ষাধিক ভোটারের স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য ১০টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি কেন্দ্রের মাধ্যমে পুরো ইউনিয়নের কার্ড বিতরণ করায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক লোকসমাগম হচ্ছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের ভোগান্তি বাড়ছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রে যেতে তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
অন্যদিকে পুরোনো কার্ড হারিয়ে যাওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়ছেন। নির্বাচন অফিসে টাকা জমা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করলেও সেটি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। দ্বিতীয় দফায় জরিমানা গুনতে গিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
জানা যায়, ঝিকরগাছার ২ লাখ ৮ হাজার ভোটারের স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। এ কার্যক্রম চলবে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য ১০টি কেন্দ্র খোলা হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। ভোটারের তুলনায় কেন্দ্রসংখ্যা কম হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ভোটারদের গ্রাম থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব বেশি হওয়ায় তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। কেন্দ্রে যাওয়ার পর ভোটাদের রোদে দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এছাড়াও পুরোনো কার্ড হারিয়ে ফেলা ভোটাররা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। অনেকে জরিমানা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করলেও কেন্দ্রে এসে দ্বিতীয় দফায় আবার জরিমানা দিতে হচ্ছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করছেন।
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, পুরোনো আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়েছিল। নির্বাচন অফিসে ৩৭০ টাকা জমা দিয়ে কার্ড তুলেছি। সেই কার্ড নিয়ে এসেছি নতুন স্মার্ট কার্ড নিতে। এখন বলছে আবার ৩৭০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এভাবে দুইবার টাকা দিয়ে আমি স্মার্ট কার্ড নেব না।
একই গ্রামের নাজিম উদ্দিন বলেন, ফিঙ্গার ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করার পর বলছে আমাকে জরিমানা দিতে হবে। তারা বলছে আমার কার্ড নাকি দুই নম্বর। আমি বলেছি সরকারকে টাকা দিয়ে নির্বাচন অফিস থেকে কার্ড নিয়েছি। দুই নম্বর হলো কীভাবে?
ইকবাল হোসেন নামে একজন বলেন, আমার মায়ের আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়েছিল। উপজেলা ইসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়েছি। এরপর নির্বাচন অফিস থেকে আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছি। সেই কার্ড নিয়ে এসেছি। এখন তারা বলছে, ওই কার্ডে হবে না, আবার টাকা জমা দিতে হবে। এ তো হয়রানি ও দুর্নীতি ছাড়া কিছুই না।
লাইনে দাঁড়ানো শিলা বেগম বলেন, বাচ্চা কোলে নিয়ে লাইনে এভাবে দাঁড়ানো যায় না। তবুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। গ্রামে কার্ড বিতরণ করলে এত কষ্ট হতো না। যাতায়াত ভাড়াও লাগত না।
আবদুল মালেক নামে আরেক ভোটার বলেন, ৬শ টাকার কাজ (মজুরি) কামাই (বন্ধ) করে স্মার্ট কার্ড নিতে এসেছি। এখানে আসতে-যেতে ভাড়া লাগছে ৬০ টাকা। তারপর আবার কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। ভোগান্তির শেষ নেই।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাচন অফিসার সৌমেন বিশ্বাস ছন্দ বলেন, জরিমানার বিষয়ে যারা অভিযোগ করছেন, তারা বাইরের কম্পিউটারের দোকান থেকে কার্ড তৈরি করেছেন। তারা কম্পিউটারের দোকানে টাকা দিয়েছেন। তাদের টাকা নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে জমা হয়নি। কম্পিউটারের দোকান থেকে দেওয়া এনআইডি কার্ডটি নির্বাচন অফিসের সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা অতিরিক্ত কেন্দ্র চালুর দাবি করেননি। তারা দাবি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।