খাদ্যশস্য পাঠানো ও গ্রহণের ভিডিও ক্লিপ দিতে হবে
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পরিবহণের সময় সরকারি খাদ্যশস্য আত্মসাৎ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ। এখন থেকে প্রেরক কেন্দ্র ও প্রাপক কেন্দ্র-দুই জায়গা থেকেই খাদ্যশস্য গ্রহণ ও সরবরাহের ভিডিও ক্লিপ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে হবে। ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। এ নির্দেশনা চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের দুটি সাইলো, ১১ জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়, একটি চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, তিনটি সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো-সিএসডি, একশটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও ১১৫টি লোকাল স্টোরেজ ডিপোর-এলএসডির কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন সিএসডির ব্যবস্থাপক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী গন্তব্য তথা প্রাপক কেন্দ্রের আগেই চাল ও গম বোঝাই ট্রাক আনলোড করে সরকারি খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করে আসছিল। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অনেক ঘটনা ধরাও পড়ে। এদিকে এ নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, বিভাগীয় খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদার-(ডিআরটিসি) ও আন্তঃজেলা খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদার (আইআরটিসি) সূচির আওতায় চাল ও গম প্রেরণ কেন্দ্র হতে বোঝাই এবং প্রাপক কেন্দ্রে খালাস প্রক্রিয়ায় ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ০১৭৮৪.. প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রেরণ কেন্দ্র হতে চাল/গম বোঝাইকৃত ট্রাকের ভি-ইনভয়েসের কপি, ট্রাক ও গুদামের নম্বরসহ ১০ সেকেন্ডের ভিডিও প্রেরণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রাপক কেন্দ্রে আগত চাল/গম বোঝাইকৃত ট্রাকের ভি-ইনভয়েসের কপি, ট্রাক ও গুদামের নম্বরসহ ১০ সেকেন্ডের ভিডিও প্রেরণ করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভিডিও ক্লিপ প্রেরণে ব্যর্থতার কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যথায় ধরে নেওয়া হবে বোঝাইকৃত খাদ্যশস্য প্রাপক কেন্দ্রে পৌঁছায়নি। এতে সংশ্লিষ্ট এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/সিএসডির তল্লাশি ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/সাইলোতে লোডিং পয়েন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই দায়িত্ব থেকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হবে এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ) মোতাবেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চট্টগ্রাম জেলার একাধিক এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ নির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিএসডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে প্রাপক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চাল ও গম বোঝাই ট্রাক আত্মসাৎ করা হচ্ছিল। সবেচেয়ে বেশি সরকারি খাদ্যশস্য বোঝাই ট্রাক আত্মসাৎ হয় পার্বত্য জেলাকেন্দ্রিক গাড়িগুলো থেকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বিভিন্ন ধরনের ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ইস্যু হয়ে থাকে। এসব ডিও ইস্যু করে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় বা ডিসি ফুড অফিস। এসব ডিও কিনে নেন চাল পাচারকারী চক্রটি। ডিও’র মেয়াদ থাকে সাধারণত ১৫ দিন থেকে ৩ মাস পর্যন্ত। এই মেয়াদের মধ্যে চাল পাচারকারী চক্রটি সরকারি সূচি বা প্রোগ্রামের মাল (চাল ও গম) সিএসডি বা এলএসডি থেকে বের হলে ডিও’র মাল দেখিয়ে বাইরে বিক্রি করে দেয়। এতে যোগসাজশ থাকে সংশ্লিষ্ট গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও।
চলতি বছরের ১৬ মে হালিশহর সিএসডি থেকে খাদ্যশস্য বহনকারী ট্রাক-চট্টমেট্রো-ট ০২-০৫৮২, ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৩০৮০ ও নম্বর চট্টমেট্রো-ট ১১-০৯৮১ বের হয়। ট্রাকগুলো খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি খাদ্য গুদামে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা মেট্রো-ট ১৬-৩০৮০ নম্বরের ট্রাকটি ভিন্ন রুটে যাওয়ার পথে পটিয়া থানা পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়। অন্য দুটি ট্রাকও গন্তব্যে যায়নি। সরকারি চালবাহী এই ট্রাক দুটিও ভিন্ন রুট ধরে লোহাগাড়া উপজেলার দিকে চলে যায়। একইভাবে ৯ মে দেওয়ান হাট সিএসডি থেকে বের হওয়া একটি খাদ্যশস্যবাহী ট্রাক বন্দর থানার রশিদ বিল্ডিং এলাকার দাম্মাম ফিলিং স্টেশন থেকে আটক করা হয়। ২০২০ সালে নগরীর সাগরিকা এলাকার বিটাক মোড় এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে থেকে ডবলমুরিং থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২১ হাজার বস্তা সরকারি চাল ও ১৫০০ পিস খাদ্য অধিদপ্তরের সিলমোহরযুক্ত খালি বস্তা, ৯ হাজার ২০০ পিস প্লাস্টিকের খালি বস্তা ও ৫০০ পিস চটের খালি বস্তা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করা হয়।