পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি দুধকুমার নদের ওপর সেতু নির্মাণ
মাহবুব রহমান, রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কপথে নির্মাণাধীন সড়ক সেতুর কাজ গত পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। তাই ঝুঁকি নিয়েই শতবছর অগে নির্মাণ করা রেলসেতু দিয়েই স্থলবন্দরে পণ্য অনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রেলসেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালে। এ অবস্থায় যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্য সম্প্রাসারণের লক্ষ্যে ২০১২ সালে ভূরুঙ্গামারীতে সোনাহাট স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়। ওই বন্দরের কাছেই দুধকুমার নদের ওপর প্রায় শতবছরের পুরোনো রেলসেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সরকার সেখানে একটি সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পাঁচ বছর আগে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও তা আজও শেষ হয়নি। এদিকে পরিবহণব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় স্থলবন্দরটি দিয়ে আমদানি-রপ্তানি দিনদিন কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম জানান, সোনাহাট স্থলবন্দর চালু হওয়ায় ওই পথে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ আসামের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যায়। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পর্ব রাজ্যগুলোর পণ্য পরিবহণের জন্য বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পথে আমদানি-রপ্তানি করতে হলে সাড়ে তিনশ থেকে ৫শ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। অন্যদিকে সোনাহাট স্থলবন্দর পথে দূরত্ব কম হওয়ায় বিভিন্ন কাঁচামাল, কয়লা, পাথর, ডলোমাইডসহ বিভিন্ন পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা খুবই সহজ। এতে পণ্য পরিবহণ ব্যয় কম হয় এবং সময়ও কম লাগে। কিন্তু পুরোনো রেলসেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি করা পণ্য পরিবহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এ বন্দরপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রেলসেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও বিকল্প কোনো পথ না থাকায় ওই সেতুটি দিয়ে পণ্যবাহী মালামাল ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ বছর আগে সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কের দুধকুমার নদের ওপর একটি সড়ক সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু এখনো এর কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক সেতু নির্মাণের সময় ধরা হয়েছিল দেড় বছর। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দুই বছর ৬ মাস আগেই সেতু নির্মাণের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। গত পাঁচ বছরে সেতুর কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। যে কোনো সময় নড়বড়ে রেলসেতুটি ভেঙে পড়লে বড় বিপদে পড়বেন এলাকার মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।
সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুরোনো রেলসেতুটি যে কোনো সময় ভেঙে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেতুটি ভেঙে গেলে স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামিম রেজা বলেন, ‘সড়ক সেতুর ডিজাইন সংশোধনের কারণে প্রায় দুই বছর কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়া নদীতে ছয় মাসের অধিক সময় পানি থাকায় কাজ করা যায় না। বৃষ্টির কারণেও কাজের সমস্যা হয়।’
সেতু নির্মাণের ধীরগতির কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, সেতুর বিষয়ে ইতোমধ্যে ভূমি, সড়ক ও জনপথ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া সড়ক বিভাগের সচিব মহোদয় সরেজমিনে সোনাহাট সেতুর নির্মাণকাজ তদন্ত করে গেছেন। আশা করা যায়, দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করা যাবে।