সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘সরবরাহ কম’ অজুহাতে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বেড়েছে বেশিরভাগ পণ্যের দাম। সিন্ডিকেট করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে আগের মতোই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না চিনি ও ভোজ্যতেল। আগের মতো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ৬৫ টাকার কমে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দামও আকাশচুম্বী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা আগের কেনা চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন। ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তদারকির অভাবে সরকারের নির্দেশনা মানছেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরবরাহ কম বলা হলেও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। অজুহাত দিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। চাক্তাই- খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। খুচরায় আগের মতোই পেঁয়াজের দাম অস্থির। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় এবং পেঁয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম কমছে।
খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, আড়তগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। বিভিন্ন আড়তে শত শত বস্তা পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। ট্রাকে ট্রাকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পেঁয়াজ যাচ্ছে। তবে খুচরা পর্যায়ে দোকানগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ কম দেখা গেছে। এছাড়া মসলাজাতীয় পণ্যের দামও বাড়তির দিকে। মানভেদে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত বছরের এ সময় জিরার কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
গত সপ্তাহে লবঙ্গের কেজি ছিল ১৪শ থেকে ১৫শ টাকা। কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা। বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। গত বছরের এই সময়টাতে বিক্রি হয় ১১শ থেকে ১২শ টাকা কেজিদরে। একইভাবে গত সপ্তাহে ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম বেড়ে এখন হয়েছে ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এক বছর আগে দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। এক বছর আগে পণ্যটি কেনা যেত ১২০ থেকে ১৭০ টাকায়। ভালোমানের আদা বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৫০ টাকা। তবে মানভেদে ২০ টাকা কমবেশি রয়েছে।
শুক্রবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আমদানিকৃত ভালোমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়। যা দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে। আর একটু নিুমানের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫১ টাকা দরে। এসব পেঁয়াজও দুই দিন আগে ৫৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু খুচরা বাজারে ভালোমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকার বেশি দামে। আর একটু নিুমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।
দুই সপ্তাহ আগে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। শুল্ক আরোপের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এক লাফে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের আড়তদার মহিউদ্দিন মহি বলেন, বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমদানিকারকদের দাবি আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে।
বাজারদর : সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম আগের মতোই। বেগুন আকারভেদে কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০, কাঁচামরিচ ১৪০ থেকে ১৬০, ঢেঁড়স, পটোল, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ১২০ থেকে ১৫০, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০, শসা ৫০ থেকে ৭০, কচুমুখি ৮০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, ঝিঙা ৮০, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দাম আগের মতোই রয়েছে। সোনালি মুরগি মানভেদে কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চিকন মসুর ডাল ১৪০ ও মোটা মসুর ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি পাবদা মাছ ৪৫০ থেকে ৫শ টাকা, ছোট আকারের রূপচাঁদা ৭শ টাকা ও বড় আকারের রূপচাঁদা হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২শ, পাঙাশ ১৮০ থেকে ১৯০, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ২৬০ থেকে ৩শ, কাতল আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪শ, মৃগেল ২২০, কোরাল ৮শ ও চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৭শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের ইলিশ ১২শ থেকে ১৩শ টাকা, ছোট ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।