নিয়ন্ত্রণহীন ভোগ্যপণ্যের বাজার
মজুমদার নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পেঁয়াজে লাভ করছেন ১০ টাকা। নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬১ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে ৭০ টাকা কেজি দরে। খুচরা ও পাইকারিতে দামের এমন পার্থক্যে ঠকছেন ক্রেতারা। বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ না থাকায় খুচরা বিক্রেতারা পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম ইচ্ছেমতো আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ভোজ্যতেলের অবস্থাও একই। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও বিক্রি হচ্ছে না ভোজ্যতেল। খোলা সয়াবিন ১৫৪, বোতলজাত ১৭৪ এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এর চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। খোলা ১৬০, বোতলজাত ১৮০ এবং ৫ লিটারের বোতল ব্র্যান্ডভেদে ৮৬০-৮৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন খুচরা দোকানে। নগরীর বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ ও প্যাকেটজাত ১৪৫-১৫০ টাকায় যদিও সরকার নির্ধারিত দাম যথাক্রমে ১৩০ ও ১৩৫ টাকা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার দাম বাড়ালে তা মুহূর্তেই কার্যকর হয়। আর দাম কমালে তা দিনের পর দিন কার্যকর হয় না। সীমাবদ্ধ থাকে কাগজ-কলমে। খুচরা ও পাইকারিতে নির্ধারিত মূল্যে ভোগ্যপণ্য বিক্রিতে প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তারা জানান, গত মাসে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপরই দেশের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজির দাম এক লাফে ২৫ টাকা বেড়ে যায়। অথচ বাড়তি শুল্কের পেঁয়াজ তখনো দেশের বাজারে প্রবেশই করেনি। এভাবে একাধিক সিন্ডিকেট পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে রাতারাতি লুটে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় বিপণিকেন্দ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ভালো মানের ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০-৬১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে একটু নিুমানের বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৮ টাকায়। চকবাজার, আতুরার ডিপো হাশেম বাজার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বিক্রেতারা অবশ্য জানান, কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করলেও তাদের লাভের পরিমাণ আরও কিছু কম। কেননা এর সঙ্গে পরিবহণ ভাড়া যুক্ত হয়।
এদিকে মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও মাছ ও সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। দু’একটি ছাড়া ৭০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি নেই। ১০০ টাকার বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে কয়েক ধরনের সবজি। কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগি ৩২০, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৫০-১৬০ টাকায়। গরুর মাংস হাড়সহ ৮৫০ ও হাড়ছাড়া ৯৫০ এবং খাসি ১০৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজার দিন দিন চড়ছে। প্রতি কেজি বরবটি ১৪০, টমেটো ১২০, কাঁচামরিচ ১২০-১৫০, করলা ৭০-৮০, গাজর ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শসা ৪০-৫০, বেগুন ১২০, পটল ৬০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, চিচিঙ্গা ৫০, ঢেঁড়শ ৬০-৭০, লাউ ৫০, কচুর ছড়া ৭০, আলু ৪০-৪৫, কাকরোল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতারা জানান, টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্নস্থানে সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তাই সবজির সরবরাহ কম। বিশেষ করে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও উত্তর বঙ্গ থেকে সবজি আসত। এখন এই দুই অঞ্চল থেকে সবজি আসে খুব অল্প পরিমাণে।
মাছের বাজারও চড়া। ছোট আকারের পোয়া মাছ ৩৫০, বড় আকারের পোয়া ৪০০-৫০০, লইট্টা ২০০-২৪০, ছুরি ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির বড় ইলিশ ১৬০০-২০০০ এবং আধা কেজি আকারের ইলিশ ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে (প্রতি কেজি)। রূপচাঁদা বড় এক হাজার ও ছোট ৮০০, তেলাপিয়া ২৪০, পাবদা ৪০০-৪৫০, পাঙাশ ২০০, রুই ও কাতল ৩২০-৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।