অফিস সহায়কের অস্ত্রোপচার তদন্তে কমিটি
মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ড্রেসিংরুমে আড়াই বছরের শিশুকে অফিস সহায়কের অস্ত্রোপচারের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর শনিবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম এ কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ওই হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. মো. আলাউদ্দীনকে। অন্য দুই সদস্য হলেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. আব্দুল্লাহহিল কাফি ও ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. মুহা. নাঈম সিদ্দিকী। এ কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার শিশু আবিবের মা আসমা খাতুন জানান, আজ অস্ত্রোপচারের কথা থাকলেও করা হয়নি। তিনি বলেন, ক্ষতস্থানে এখনো থকথকে ঘা (ইনফেকশন) থাকায় অস্ত্রোপচার করা হয়নি বলে ডাক্তার তাকে জানিয়েছেন। আসমা আরও বলেন, এ অবস্থাতেই অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে তাকে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি যেতে বলা হয়েছে। এমন ভাবে বলা হয়েছে যে, রোববার তাকে হাসপাতাল ছাড়তেই হবে। স্বজনদের দাবি, আবিবের অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় শিশুটি কাতর হয়ে পড়েছে। হাঁটাচলা বা খেলতে পারছে না। এ অবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসা ছাড়া শিশুর জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা আসমা ও তার স্বজনদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। দশ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আবিবের মামা শিমুল। ৯৯৯ নাম্বারে ফোন পাওয়ার পরে পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও অজ্ঞাত কারণে তারা এখন আর গুরুত্ব দিচ্ছে না।
ওদিকে আবিবকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ড্রেসিংরুমে অস্ত্রোপচারের কোনো প্রমাণ নেই বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে যুগান্তরের নতুন অনুসন্ধানে আবিবের অস্ত্রোপচারের প্রমাণ মিলেছে। জরুরি বিভাগ থেকে দেওয়া পাঁচ টাকার টিকিট পাওয়া গেছে। কর্তব্যরত ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক সিরাফ সেফ-৩সহ অন্তত চারটি ওষুধ তাতে লিখেছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে যুগান্তরের কাছে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পরিচালক স্বাস্থ্য বিভাগ খুলনা বরাবর পাঠানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীদের থানায় মামলা করার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন। ১৯ আগস্ট আবিব ওরফে আকাশ অসুস্থ হয়ে পড়লে ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর জরুরি বিভাগে ড্রেসিংরুমে অফিস সহায়ক আব্দুল কুদ্দুস নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে অস্ত্রোপচার করে আবিবের খতনা করায়। স্বেচ্ছাসেবক রিপন এবং পিন্টু মিলে প্রতারণা করে আবিবের মায়ের কাছ থেকে সরকারি ফি হিসাবে দুই হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ৩ দিন পর আবিবের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে আবার সেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এখন সে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে।