Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

‘পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট না থাকাই কারণ’

বন্যায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ব্যাপক ক্ষতি

রেললাইন কোনোভাবেই বন্যার কারণ নয় : রেলপথমন্ত্রী * পাহাড়ঘেঁষা রেল প্রকল্পটি উড়াল হতে পারত : বুয়েট অধ্যাপক

Icon

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সরকারের বিশেষ এই প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু এবারের বন্যা এই রেললাইন প্রকল্পের প্রায় শত কিলোমিটারে আঘাত হেনেছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রেলপথ তছনছ করেছে। পানির তোড়ে লাইনের পাথর, মাটি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। কোথাও কোথাও কঙ্কালের মতো শুধু লোহার লাইনটুকু ঝুলে আছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, পানি কমে এলাকা না শুকালে মেরামতের কাজ টেকসই হবে না। তাছাড়া আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সেপ্টেম্বরে নয়, অক্টোম্বর মাসে উদ্বোধন হতে পারে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের স্বপ্নের এই রেলপথ।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার অন্তত ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং উপজেলার সংযোগ সড়কগুলোর সবকটি। এমন অবস্থায় পানির তোড়ে তছনছ হয়ে পড়া রেললাইন মেরামত কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু পানি নেমে গেলেই হচ্ছে না, লাইন এলাকায় মাটিও শক্ত হতে হবে। তবেই কাজ শুরু সম্ভব হবে। এর আগে কাজ শুরু করলে আবার বিপর্যয়ে পড়তে হবে। শঙ্কা রয়েছে আবারও বন্যা কিংবা পাহাড়ি ঢলের।

এদিকে স্থানীয়দের দাবি, শত বছরের মধ্যে এমন ভয়াবহ বন্যা তারা দেখেননি। এজন্য তারা দায়ী করছেন চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পকে। সমতট, পাহাড় ও বিলঘেঁষে নির্মিত এ প্রকল্পে পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট না থাকায় বন্যার পানি সরতে পারেনি। ওই এলাকায় বন্যা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বহুবার বন্যা হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি-বিপর্যয় এতটা হয়নি।

এমন অভিযোগের বিপরীতে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন সাফ জানিয়েছেন, রেললাইন কোনো অবস্থায়ই বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দুঃখ-কষ্টে তিনিসহ রেলসংশ্লিষ্টরাও ব্যথিত। নতুন এ রেলপথ দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে। বিশেষ এ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার। এ রেলপথে পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট দেওয়া হয়েছে। বন্যা হতে পারে, পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে পারে-এমনটা মাথায় নিয়েই এ প্রকল্পে পানি নামার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রেলপথ এলাকায় শুধু পানি রয়েছে এমনটা নয়, পুরো এলাকায়ই পানি। মন্ত্রী জানান, বন্যায় রেলপথের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন নির্মাণ করা পুরো পথেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার পথে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লোহার লাইন ছাড়া সবই ভেসে গেছে। এখন দ্রুত নয়, সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে বাকি নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। আমরা আশা করছি আগামী ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রামের তিন উপজেলার বাসিন্দারা পানিবন্দি রয়েছেন। রেল প্রকল্পের অধিকাংশ এলাকা এখনো জলমগ্ন। লাইনের পাশে থাকা রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় মেরামত সামগ্রী কিংবা কোনো যান পৌঁছানো যাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্ত লাইন এলাকায়।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটারের প্রকল্পটি দুটি ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গুটিকয়েক স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ হতে কিছুটা বাকি রয়েছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সাতকানিয়া এলাকায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রেলপথ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

যুগান্তরের চন্দনাইশ প্রতিনিধি আবিদুর রহমান বাবুল জানান, রেললাইন এলাকায় লাইন উপচে বন্যার পানি থইথই করছে। দোহাজারী ৭নং ওয়ার্ড কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এমন বন্যা আগে হয়নি। সবাই বলছে এর জন্য নতুন রেলপথ দায়ী। লাইনে আরও দ্বিগুণ ব্রিজ-কালভার্ট থাকা প্রয়োজন ছিল।

ব্যাংকার কামাল হোসেন বলেন, রেললাইন অনেক উঁচু করা হয়েছে। বিগত সময়ে যেসব বন্যা হয়েছিল-সে সময় লাইন ছিল না। বিনা বাধায় পানি নেমে যেত। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে এলাকাবাসী এও বলছেন, নতুন এই রেলপথ তাদের জন্য বড় আশীর্বাদ। লাইন ঘিরে নতুন নতুন স্টেশন হয়েছে। জায়গার দাম বাড়ছে। সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে। পাহাড়ি ঢলের পানি যাতে আরও দ্রুতগতিতে লাইনের ব্রিজ-কালভার্ট দিয়ে সাগরে নামতে পারে সেই ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তারা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম সামছুল হক যুগান্তরকে বলেন, এবারের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সাধারণত পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিচের দিকে নামে। নামতে বাধা পেলেই ফুলেফেঁপে ওঠে। নতুন এ রেলপথ নিশ্চয় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে বিনা বাধায় পানি সাগরে পৌঁছত দ্রত সময়ে। এখন পদে পদে বাধা পাচ্ছে। পাহাড়ঘেঁষা রেল প্রকল্পটি উড়াল হতে পারত। এতে পরিবেশ যেমন রক্ষা হতো-বন্যায় এমন বিপর্যয়ও হতো না। প্রাকৃতিকভাবে পানি নিষ্কাশন আর বাঁধের ফাঁকে ফাঁকে পানি নিষ্কাশন নিশ্চয় বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম