Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

প্রশ্নের মুখে পরামর্শক ব্যয় প্রস্তাব

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্নের মুখে পরামর্শক ব্যয় প্রস্তাব

গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন বাংলাদেশে নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই এ রকম প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। এরপরও সাড়ে ৬ লাখ গ্রাহকের জন্য স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের নতুন এক প্রকল্পে শুধু পরামর্শক খাতেই ১৯ কোটি ৯ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘স্মার্ট মিটারিং এনার্জি ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ইনস্টেলেশন অব প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর টিজিটিডিসিএল)’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ ব্যয়কে অযৌক্তিক মনে করে যৌক্তিকভাবে কমানোর পক্ষে মত দিতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। সেই সঙ্গে পরামর্শকদের দৈনিক ভাতা, বিমান ভাড়া, গাড়ি ভাড়া ও যোগাযোগ ব্যয় ইত্যাদি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে। আগামী ২ আগস্ট অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বিভিন্ন খাতের এ ধরনের অযৌক্তিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলবে সংস্থাটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা পিইসি সভায় অবশ্যই নানা ব্যয়ের বিষয় জানতে চাইব। বিশেষ করে চলমান ও আগের সমাপ্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে কী রকম পরামর্শক লেগেছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রয়োজনের বেশি পরামর্শক নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। পিইসি সভায় শুধু আমরা নই, আইএমইডি, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন। সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩২৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা, এডিবির ঋণের এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং তিতাস গ্যাসের নিজস্ব তহবিলের ১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পেট্রোবাংলার আওতাধীন টিজিটিডিসিএল। ইতোমধ্যেই তিতাসের অধিভুক্ত এলাকায় এডিবির অর্থায়নে আট হাজার ৬০০টি এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে তিন লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে পরামর্শকসহ বিভিন্ন খাতে সম্ভাব্য ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন।

জানা যায়, পিইসি সভায় পরামর্শক খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে মত দেবে কমিশন। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরামর্শকের জন্য ভাতা ও বিভিন্ন ভাড়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে। সেই সঙ্গে পরামর্শকদের টিওআর (টার্ম অব রেফারেন্স) পুনর্গঠিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) যুক্ত করতে বলা হবে। প্রকল্পের আওতায় সাপ্লাই, ইনস্টলেশন অ্যান্ড কমিশনিং অব মিটার টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিবারেশন বেঞ্চের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ব্যয় চার টাকা ধরা হয়েছে। এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে পিইসি সভায় বলা হবে, যেখানে টিজিটিডিসিএল-এর প্রক্রিয়াধীন গ্যাস সেক্টর ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট মিটিগেশন প্রজেক্টে এক্ষেত্রে ইউনিট ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে তিন টাকা। অথচ প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির ভিত্তি কী? এর যৌক্তিকতাও জানতে চাওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে তিতাসের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সঙ্গে বৃহস্পতিবার কথা বললে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, আপনাদের যাই বলব তাই তুলে ধরবেন। সুতরাং আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের ক্রয় পদ্ধতি নির্ধারণে পিপিআর-২০০৮-এর বিধি-১৭ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। ক্রয় পদ্ধতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জিডি-৫ এবং জিডি-৬ এর ক্ষেত্রে একই ধরনের পণ্যসামগ্রীকে দুটি ভিন্ন প্যাকেজে এবং একাধিক লটে বিভক্ত করে আরএফকিউ পদ্ধতিতে ক্রয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্যাকেজ দুটিকে একত্রিত করে ওটিএম পদ্ধতি অনুসরণের পক্ষে পরিকল্পনা কমিশন। আরও জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় মোট তিন হাজার বর্গফুট অফিস স্পেস ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট ১০০ টাকা এবং প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ ব্যয়কে যৌক্তিক পর্যায়ে করা দরকার বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পে ২৭০০ সিসির একটি জিপ, চারটি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং ২৫টি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ খাতে ব্যয় ধরা হবে তিন কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু প্রস্তাবিত যানবাহনের ধরন ও সংখ্যার যৌক্তিকতা জানতে চাইবে কমিশন। সেই সঙ্গে যানবাহন ভাড়া বাবদ দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার ব্যয় প্রাক্কলন নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে। প্রকল্পের আওতায় মিটারের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০ বছর। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসিক ২০০ টাকা করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই টাকা ধরার ভিত্তি জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি প্রকল্পে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে ১৯ কোটি টাকা এবং প্রাইজ কন্টিনজেন্সি খাতে ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা প্রস্তাব কতটুকু যৌক্তিক সেটিও প্রশ্ন করা হবে। কেননা প্রকল্পটির আওতায় নির্মাণধর্মী কাজ কম থাকায় এ দুই খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো যায় বলে কমিশনের মত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম