Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ফেরত এসেছে তিন কনটেইনার

ইউরোপ-আমেরিকায় পাঠানো চিংড়িতে জীবাণু শনাক্ত

Icon

আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইউরোপ-আমেরিকায় পাঠানো চিংড়িতে জীবাণু শনাক্ত

ফেরত এসেছে তিন কনটেইনার চিংড়ি, ফাইল ছবি

খুলনাঞ্চল থেকে রপ্তানি করা সাত কনটেইনার চিংড়িতে ক্ষতিকর জীবাণু পেয়েছে আমদানিকারক দেশ। এর মধ্যে তিন কনটেইনার চিংড়ি ফেরত পাঠিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকা। রপ্তানি করা এসব চিংড়িতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, লোহার স্ক্রু ও সিরিঞ্জের নিডল পাওয়া গেছে। সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল আসছে পরিদর্শনে।

খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, খুলনাঞ্চল থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকায় পাঠানো ৭ কনটেইনার চিংড়িতে জীবাণু পেয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানির প্রায় ২০ হাজার বক্স চিংড়ি ফেরত এসেছে। এগুলো মোংলা বন্দরে খালাসের পর কোম্পানিগুলো ফেরত নিয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩ বছর সময়ে এসব জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাগুরার বিবেকানন্দ শিকদারের মালিকানাধীন জাপান ফাস্ট ট্রেড লিমিটেডের চিংড়ি রপ্তানি হয় আমেরিকায়। সেখানকার মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর চিংড়িতে সিমি কার্বাজাইড অ্যান্টিবায়োটিক পেয়েছে। খুলনার রূপসার ডা. সৈয়দ আবু আছফারের মালিকানাধীন অর্গানিক শ্রিম্প এক্সপোর্ট লিমিটেডের মাছে ভিভরিওপ্যারা ভাইরাস পেয়েছে। একই এলাকার মো. শরিফুল আলমের মালিকানাধীন রোজেমকো সি ফুড লিমিটেড ও গৌতম দাসের মালিকানাধীন সাতক্ষীরা দীপা সি ফুড লিমিটেডের রপ্তানি করা চিংড়িতে মেলাকাইট গ্রীন অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি রয়েছে। খুলনার রূপসার এসএম মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন এটলাস সি ফুড লিমিটেডের চিংড়িতে স্ক্রু পেয়েছে। একই এলাকার কামরুল হাসানের মালিকানাধীন সালাম সি ফুড লিমিটেডের চিংড়িতে স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছে। সাতক্ষীরার মো. জালাল উদ্দিনের মালিকানাধীন ক্রিমসন রোজেলা সি ফুড লিমিটেডের মাছে সিরিঞ্জের ভাঙা নিডল পাওয়া গেছে।

সাত কোম্পানির মধ্যে সালাম সি ফুড, রোজেমকো সি ফুড ও দীপা সি ফুডের প্রায় ৬০ হাজার বক্স হিমায়িত চিংড়ি মোংলা বন্দরে ফেরত পাঠিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া স্যালমোনেলার কারণে মানবদেহে এক ধরনের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, যা অনেক সময় খাদ্য অথবা পানিকে দূষিত করে তোলে। এর ফলে খাদ্যসৃষ্ট সংক্রমণ হয়, যা স্যালমোনেলসিস নামে পরিচিত। এ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে মানুষ লিভার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে ক্যানসারেরও ঝুঁকি তৈরি করে। ইউরোপ-আমেরিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব বিষয়গুলো ধরা পড়ায় তারা সতর্ক করেছে বাংলাদেশের মৎস্য ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগকে।

মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের সূত্র আরও জানায়, আমদানিকারক দেশ হিমায়িত খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রপ্তানিকারকদের সতর্ক করে বলেছে ভবিষ্যতে তাদের খাদ্যে অপদ্রব্য থাকলে বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ এবং জীবাণুর উপস্থিতি থাকায় ২০০৯ সালে ইউরোপ বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। এরপর আবারও ওই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় তারা সতর্ক করেছে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফিশারিজ অ্যান্ড ভেটেনারিজ অরগানাইজেশন (ইভিএফভিও) অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করবে। এ সময় সংস্থার প্রতিনিধিদলটি খুলনা-সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের খামার, ডিপো ও হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানাগুলো পরিদর্শন করবে।

এদিকে ক্ষতিকর জীবাণু থাকা অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর চিংড়ি রপ্তানি আপাতত বন্ধ থাকবে। চিংড়িতে অপদ্রব্য ধরার পর এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-যেসব খামার থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়েছে সেখানকার পানি ও মাটি পরীক্ষা করা। ডিপো ও কারখানার পরিবেশ পরীক্ষা করা। এসব পরীক্ষায় উতরে গেলে তবেই অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো পুনরায় চিংড়ি রপ্তানি করতে পারবে।

মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হওয়ার পর আমদানিকারক দেশগুলোর অনীহা দেখা দিয়েছে। দাম কম ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে রপ্তানি বেশ কমেছে। শুধু আমাদের দেশ নয় বিভিন্ন দেশের মাছ ফেরত যায়।

সাত কনটেইনারের মধ্যে চার কনটেইনার পণ্য ইউরোপের বাজারে বিক্রি হয়ে গেছে। ওই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ স্থানীয় মার্কেট থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করে এসব জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ফলে এ জীবাণু যে বাংলাদেশ থেকেই গেছে তা নিরূপণ করা কঠিন। বাকি তিন কনটেইনার সেখানকার বন্দর থেকেই ফেরত এসেছে। তিনি আরও জানান, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের খামার, ডিপো ও হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে। আমরাও কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম