ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৭ দিনের শিশুর জীবন সংকটাপন্ন
শিপন হাবিব
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
৪ জুলাই জন্ম নেওয়া নবজাতক মাত্র শ্বাস নিতে শিখেছে। পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার কয়েকদিনের মধ্যে ডেঙ্গুর কবলে পড়ে এমন করুণদশা হবে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি শিশুটির বাবা-মা। এ যেন তাদের ললাটে লেখা দুর্ভাগ্য। এখন শিশুটির ঠিকানা রাজধানীর সেগুনবাগিচার বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২। ছোট্ট শিশু জায়ার হাতে-পায়ে ক্যানোলা। তার প্লাটিলেট নেমে এসেছে ১৬ হাজারে। শব্দহীন কান্না পাশে থাকা মায়ের। একুট পরপর চোখ মোছেন। কখনও দু’হাত তুলে মোনাজাত, কখনও সিজদায় পড়ছেন। চিকিৎসক, নার্স, স্বজনরা সবাই বলছেন-‘আল্লাহকে ডাকেন। তিনিই রক্ষা করবেন।’ বাঁচা-মরার এক অনিশ্চয়তা মধ্যে ছোট্ট শিশুটির চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার ওই হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৭ শিশুর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আসা আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকরা দিশেহারার মতো এদিক-সেদিক ছুটছেন। ৫০৩ নম্বর শিশু ওয়ার্ডের ৬ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ছোট্ট এক শিশুর পাশে সিজদায় পড়ে কাঁদছেন তার মা। এ মায়ের কান্না দেখে অন্যরাও কাঁদছিলেন। পাশে ৮ নম্বর বেডে থাকা দেড় বছরের শিশু ফিহাকে ঘিরে কান্না করছিলেন তার মা। স্বজনরা জানান, অনেক শিশু শক সিনড্রোম নিয়ে হাসপাতালে আসছে। কারও কারও উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানান, শক সিনড্রোম হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। শরীর শীতল হয়ে পড়ে। ত্বকের ভেতর, নাক-দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। শিশু জায়ার মা উম্মে কুলসুম ইতি জানান, ৪ জুলাই এ হাসপাতালেই জন্ম হয়েছিল তার সন্তানের। ৭ দিন আগে হাসপাতাল থেকে রাজধানীর মালিবাগের ভাড়া বাসায় উঠেন। শনিবার প্রচণ্ড জ্বর উঠে জায়ার। রোববার (১৬ জুলাই) সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইতোমধ্যে ৫ বার প্লাটিলেট মাপা হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার প্লাটিলেট নেমে আসে ১৬ হাজারে। উম্মে কুলসুম ইতি আরও একটি কষ্টের কথা জানান। তা হলো-২০২০ সালে তার আরেকটা কন্যাসন্তান হয়েছিল। জšে§র ১৩ দিনের মাথায় সে মারা যায়।
৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন দেড় বছরের শিশু ফিহা। মুখের ওপর মুখ রেখে কুরআনের আয়াত পড়ছিলেন মা তমা আক্তার। তসবি হাতে নানা আবু তাহের ও নানি লিলুফা ইসলাম দোয়া করছিলেন। ছোট্ট এ ফিহার প্লাটিলেটও দ্রুত নেমে যাচ্ছে।
পাশের শয্যায় থাকা হাফসা নামের দেড় বছরের এক শিশুকে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন তার মা। তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে দুদিন আগে এ হাসপাতালে ভর্তি করান ফিহাকে। তার প্লাটিলেট দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, ডেঙ্গু আকান্ত শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রোগের সঙ্গে শিশুদের লড়ার ক্ষমতা কম থাকে। শুধু এ হাসপাতালে নয়, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে শক সিনড্রোম হলেই উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। শক সিনড্রোম হলে শিশুদের শরীর শীতল হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বড়দের আশপাশে মশা ঘুরলে কিংবা কামড় দিতে এলে কিছুটা হলে বুঝতে পারেন। কিন্তু শিশুরা অবুঝ। তারা বুঝতে পারে না। এজন্য যাদের বাসায় শিশু রয়েছে, তাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। বিশেষত পাড়ায় যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তা হলে শিশু থেকে প্রবীণ, সবাইকে সাবধান হতে হবে।
চিকিৎসকরা জানান, আক্রান্ত শিশুর বুক-পেটে পানি জমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে বুকে-পেটে পানি জমে ও প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায়। এ ছাড়া বমি হলে ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এ সময় জ্বর হলে কোনো অবস্থাতেই নিজেরা চিকিৎসা করা ঠিক নয়। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।