চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতাল
সাধারণ রোগীর সঙ্গে চিকিৎসা চলছে ডেঙ্গু রোগীরও
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীর সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গি রোগীদের। রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে মেঝেতে রেখে। অনেক ডেঙ্গু রোগী থাকছেন মশারির বাইরে। এ কারণে সাধারণ রোগী ও স্বজনরাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০১ ডেঙ্গু রোগী।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ১৮ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১ হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এ মাসের ১৮ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৭ জন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ৭৭, ফেব্রুয়ারিতে ২২, মার্চে ১২, এপ্রিলে ১৮, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুনে ২৮৩ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে ২৩০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার সরেজমিন চমেক হাসপাতালের ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ রোগীর সঙ্গেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। অধিকাংশ রোগী থাকছেন মশারির বাইরে। ডেঙ্গু রোগীর পাশের বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্যান্য রোগী। ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বারান্দায়। একইসঙ্গে চিকিৎসা চলছে সাধারণ রোগীদের। অন্যদিকে মশার কামড়ের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে অবস্থান করছেন সাধারণ রোগী এবং তাদের স্বজনরা। এ নিয়ে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কেও রয়েছেন তারা। চমেক হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত এক রোগীর স্বজন নগরীর আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনি এলাকার বাসিন্দা আবদুস সোবহান বলেন, ‘আমার বাবা ডায়রিয়া আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু আমাদের ডেঙ্গু রোগীর পাশে বেড দেওয়া হয়েছে। এখানকার অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী মশারির ভেতর থাকছেন না। তাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ নিয়ে চিন্তায় আছি।’
১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী মোতালেব হোসেন বলেন, ‘সারাক্ষণ মশারির ভেতর থাকতে কষ্ট হয়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গরমে অস্থির হয়ে যাই। এ কারণে কিছুক্ষণ মশারির বাইরে থাকি, আবার ঢুকে যাই।’ একই চিত্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং সীতাকুণ্ডে বিআইটিআইডি হাসপাতালেও।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ২, হাসপাতালে ভর্তি ১০১ : জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ মারা যায় ১০ মাসের শিশু রাজশ্রী ধর ও ৩৫ বছরের গৃহবধূ এলিনা হক। দুজনই চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাজশ্রী চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাট গ্রামের রাজীব ধরের মেয়ে। অন্যদিকে তিন সন্তানের মা এলিনা হক চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের দক্ষিণ জোয়ারা গ্রামের মো. টিপুর স্ত্রী।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১০১ ডেঙ্গু রোগী নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ২০ জন, চমেক হাসপাতালে ৩১ জন এবং চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ জন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান যুগান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালের তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ড এবং দুটি শিশু বিভাগ মিলে বর্তমানে ৯৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স ও চিকিৎসকরা ডেঙ্গু রোগীদের মশারির বাইরে না থাকার জন্য বললেও তারা মানছেন না। আমি নিজেও এ ব্যাপারে ডেঙ্গু রোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু রোগী বা তাদের স্বজনরা সচেতন হচ্ছেন না। এসব রোগীদের পৃথক একটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’