Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

‘কৌশলে’ সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা হেফাজতের

Icon

তারিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘কৌশলে’ সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা হেফাজতের

সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হচ্ছে বহুল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ অরাজনৈতিক সংগঠনটি ধর্মীয় নানা ইস্যুতে ফের মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে। কারাবন্দি নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির পাশাপাশি ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলা ও সুইডেনের স্টকহোমে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে। এজন্য কয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হচ্ছে। সেখান থেকেই কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। সংগঠনটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এ তথ্য জানান।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস যুগান্তরকে জানান, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। সেখান থেকেই কিছু সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর বিষয়সহ আরও নানা ইস্যু আলোচনায় আসতে পারে।’

কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ঈদুল আজহার পরপরই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান হজে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরেছেন। এখন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কিভাবে গতিশীল করা যায় সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। তবে কর্মসূচি রাজধানীভিত্তিক না দেশব্যাপী হবে-তা বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে।

এক দশক আগে হেফাজতের উত্থান ছিল নাটকীয়। ‘অপারেশন শাপলা’র পর দৃশ্যপট বারবার পরিবর্তন হয়েছে। কখনো সমঝোতা, কখনো আন্দোলনের চেষ্টা-এভাবে এগিয়েছে হেফাজত। সর্বশেষ সংগঠনটি বিপর্যয়ে পড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাকেই সে সময় গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে সরকার-হেফাজত সম্পর্ক নানা মোড় নিয়েছে। হেফাজতের অবস্থানও পরিবর্তন হয়। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর হেফাজত নেতারা দাবি করে আসছেন কারাগারে বন্দি সংগঠনের নেতাদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকের পর কয়েকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন হেফাজত নেতারা। এরপর একে একে জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন হেফাজতের প্রায় সব নেতা। যদিও হেফাজতের কট্টরপন্থি হিসাবে পরিচিত কয়েকজন নেতা এখনো কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সংগঠনটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সাবেক অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় নেতা নূর হোসাইন নূরানী, মুফতি ফখরুল ইসলাম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী। মামুনুল হক বেশ কয়েকটি মামলায় হাইকোর্টে জামিন পান। তবে তার জামিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়েছে। শিশু বক্তা হিসাবে পরিচিত মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীও সব মামলায় জামিন পান। পরে জামিন স্থগিত হওয়ায় তিনিও মুক্তি পাননি। সর্বশেষ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী ও শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহার।

মাওলানা মীর ইদ্রিস বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এখনো কয়েকজন কারাগারে রয়েছেন। তবে কর্মীদের মধ্যে অনেকেই কারাগারে আছেন। নেতাকর্মীদের মুক্তি নিয়ে সরকারের সঙ্গে নানা সময়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এটা আমাদের পুরোনো অবস্থান যে, হেফাজত কখনো রাজনীতি করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।’

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ২৭ জুন গণমাধ্যমে পাঠানো এক শুভেচ্ছা বার্তায়ও সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান কারাবন্দি আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বার্তায় তারা বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে মিথ্যা মামলায় নেতারা কারাগারে বন্দি আছেন। অতি সাধারণ মামলায় তাদের এত দীর্ঘ সময় অন্যায়ভাবে বন্দি রাখা হয়েছে। আদালত থেকে জামিন হওয়ার পরও তাদের মুক্তির পথ রুদ্ধ করতে কখনো কখনো জামিন স্টে করা হচ্ছে। কখনো নতুন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে। কখনো জেলগেট থেকে আবারও নতুন মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব হয়রানি কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না।’ আদালত থেকে জামিন হওয়ার পর মামলা স্থগিত করা ও নতুন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো থেকে বিরত থাকতে সরকারের কাছে জোর দাবিও জানান সংগঠনটির শীর্ষ এ দুই নেতা।

এদিকে দলটির বেশিরভাগ নেতা মুক্তি পাওয়ার পেছনে সমঝোতার নানা খবর বেরিয়েছে। ‘কোনো রাজনীতির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না, নির্বাচনে কোনো দলকে সমর্থন করা যাবে না, ধর্মীয় ইস্যুতে আন্দোলন করার পূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, সাবেক ২০ দলীয় জোটভুক্ত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে ও সংগঠনের যেসব বক্তা উগ্র বক্তব্য দেন তাদের বহিষ্কার করতে হবে’-এ পাঁচটি শর্তের ভিত্তিতে হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।

তবে শর্তভিত্তিক সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস। তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের ইস্যুভিত্তিক কোনো সমঝোতা হয়নি। সমাঝোতা হলে তো প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড করতাম। সমঝোতার প্রশ্নই আসে না।’ তিনি বলেন, ‘হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তবে এ সংগঠনে সব ইসলামি দলের দায়িত্বশীলরা বা সমর্থকরা আছেন। তারা যার যার দলের সিদ্ধান্ত নেবেন, যেভাবে নির্বাচন করার করবেন। কিন্তু হেফাজতের বক্তব্য হলো-নির্বাচন করতেও বলা হবে না, নিষেধও করা হবে না। যেহেতু হেফাজত একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরম, এখানে কারও রাজনীতির বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করব না।’ সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৫০টির মতো মামলা তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৩৪টি মামলা হয়। আর ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট মামলা হয় ৮৩টি। এর বাইরে আরও মামলা রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম